চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন নির্বিকার

সম্পাদকীয়

শনিবার প্রথম আলোর শেষ পাতায় তিন রামদাধারীর ছবি ছাপা হয়েছে। এ ছবি দেখে পাঠক ভাবতে পারেন, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাস্তানেরা প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাস্তবে এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের ‘যুদ্ধরত’ ছবি। তিনজন রামদাধারীকে শনাক্ত করা গেছে। আরও অনেকে শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুটি ভাগ আছে, আবার এই দুটি ভাগের যথাক্রমে ৯টি ও ২টি উপভাগ আছে। গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের যেই দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তাঁদের একটি চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি), যাঁরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্য গ্রুপের নাম সিক্সটি নাইন, যাঁরা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত মে-জুনে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১৬ জন আহত হন। সেই ঘটনায় দুটি মামলাও হয়েছিল। মামলা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তঁারা বৃহস্পতিবার ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের দুই পক্ষ বহুবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের সংঘর্ষে একজন কর্মী মারা যান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রশ্ন হলো, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছেন, কেন তাঁরা একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন? পত্রিকায় রামদার ছবি দেখে ভাবার কারণ নেই তাঁরা সব সময় দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করেন। একাধিকবার তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। কয়েক দিন আগে শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র আহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের নামে তাণ্ডব হয়, সেই ঘটনাও ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে জানা গেছে।

উদ্বেগের বিষয়, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নির্বিকার। শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে তঁারা কখনো লোকদেখানো ব্যবস্থা নিলেও তাতে ক্যাম্পাসে শান্তি আসেনি কিংবা বন্ধ হয়নি ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপের সন্ত্রাসী তৎপরতাও। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম এখানকার ছাত্রলীগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফোন করেছেন।

কেন্দ্রীয় সভাপতিকে টেলিফোন করে জানাতে হবে কেন? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে কী ঘটছে, কারা সেখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে, সেসব তাঁর অজানা নয়। আর আওয়ামী লীগের নেতাই–বা কেন ছাত্রলীগ সভাপতিকে টেলিফোন করে দায়িত্ব শেষ করবেন? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবাদের মূলে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কেন ওই দুই নেতাকে একসঙ্গে বসিয়ে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছেন না? মাছের মাথায় পচন ধরলে লেজে ওষুধ লাগালে কোনো কাজ হয় না।

যেকোনো অঘটন ঘটার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি— বলে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করছে। ছাত্রত্ব চলে যাওয়ার পরও ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী হলে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের রামদাধারীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নমনীয় আচরণ যে সেখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

 বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব ক্যাম্পাসে শান্তি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করা। যারা শান্তি বিঘ্নিত করে আসছে এবং একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাঁরা তাদের বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারেন না। তদন্ত করলেই হবে না, সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশে সোপর্দ করা হোক।