জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে দুই দফা। বাড়তি যাতায়াত খরচের চাপ সইতে হচ্ছে মানুষকে, সেখানে বড় আশীর্বাদ হতে পারত রেল যোগাযোগ। দুঃখজনক হচ্ছে গত ৫০ বছরেও সেটি সম্ভব হয়নি।
এর মধ্যেও অনেক জায়গায় চালু থাকা ট্রেনও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ পর্যন্ত তিনটি ট্রেনের ক্ষেত্রে। করোনাকালে বেশ কিছু ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছিল, এর মধ্যে ছিল সেগুলোও।
কিন্তু করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও ট্রেন তিনটি চালু করা হয়নি। স্বল্প খরচে ঢাকায় যাতায়াতে হাওর অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের ভরসা ছিল ট্রেনগুলো। আড়াই বছর ধরে ট্রেন তিনটি বন্ধ থাকায় তাঁরা ক্ষুব্ধ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা পথে প্রতিদিন দুটি আন্তনগর ট্রেন যাতায়াত করে। এ ছাড়া একটি ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। এসব ট্রেনে প্রতিদিনই কয়েক গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আর রেললাইনের সংস্কার না হওয়ায় প্রায়ই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন চলাচলও বন্ধ থাকে।
বন্ধ হওয়া ট্রেন তিনটি হচ্ছে ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, লোকাল ২৪২ ডাউন ও লোকাল ২৪৪ ডাউন। ঢাকায় যাতায়াত ছাড়া কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন পেশাজীবী এসব ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য স্মৃতিবিজড়িত একটি ট্রেন। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার শুরুর দিকের ট্রেন এটি। এর সঙ্গে যুক্ত আছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক বীর ঈশা খাঁর নামও। ফলে ট্রেনটি বন্ধ থাকায় আরও বেশি হতাশ কিশোরগঞ্জবাসী। ট্রেন তিনটিতে যাতায়াতের পাশাপাশি অল্প টাকায় মালামাল পরিবহনের সুবিধাও পেতেন তাঁরা।
কিশোরগঞ্জের নাগরিক সমাজ কয়েক বছর ধরে ঢাকা পর্যন্ত নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু, ভৈরব থেকে ডাবল রেললাইন করা, চলমান আন্তনগর ট্রেনগুলোর গ্রেড উন্নীত করা ও আসনসংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। সেসব দাবি তো পূরণ হয়নি, উল্টো বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি ট্রেন।
কিশোরগঞ্জ রেলের স্টেশনমাস্টারও মনে করছেন, বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো আবারও চালু করলে গরিব যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের জন্য খুবই সুবিধা হতো। ঈশা খাঁ ট্রেনটি চালুর জন্য তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাজে লিখিত আবেদন করেছেন।
আমরা আশা করছি, রেল যোগাযোগ উন্নয়নে কিশোরগঞ্জবাসীর দাবিগুলো সুবিবেচনা করা হবে। সেই সঙ্গে বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো দ্রুত চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেখানকার জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে।