বন্ধ করে দিলে আবার চালু হয় কীভাবে

সম্পাদকীয়

শীতকাল মানেই ইটভাটার রমরমা মৌসুম। এ সময় ভাটামালিকেরা প্রচুর টাকাও লগ্নি করেন। পুরোনো বা বন্ধ হওয়া ভাটাগুলোও আবার চালু হয়ে যায়। যদিও দেশের বেশির ভাগ ইটভাটাই অবৈধ। তেমনি একটা অবৈধ ইটভাটা আবারও চালু হয়েছে বরিশালের উজিরপুরে। এতে সেখানে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পরতে পরতে আইন লঙ্ঘন করে উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে চলছে এই অবৈধ ইটভাটা। সেটির পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স কিছু নেই। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দুটি বাজারসংলগ্ন কৃষিজমিতে এটি স্থাপন করা হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ী এমন এলাকায় ও জমিতে ইটভাটা স্থাপন পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

২০১৫ সালে মেসার্স সফিক এন্টারপ্রাইজ নামের এই ইটভাটা চালু হয়। কিন্তু ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকায় এলাকাবাসী এটি বন্ধে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে প্রশাসন ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেয়।

এখন পুরোনো মালিক সফিকুর রহমানের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে ভিন্ন নামে আবারও ইটভাটাটি চালু করেছেন রিপন হাওলাদার ও রুবেল খলিফা নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি। গত নভেম্বরে শুধু নাম পরিবর্তন করে মেসার্স আবির ব্রিকস নামে পুরোনো ইটভাটাটি আবার চলছে। এক মালিক স্বীকারও করেছেন, লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা চালু করেছেন তাঁরা।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ক্ষমতার জোরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধু ইটভাটাই চালু করেননি তাঁরা, অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি তুলে ও সন্ধ্যা নদীর তীরের চর কেটে ইট তৈরি করে থাকেন এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ান, যা বেআইনি। ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে কৃষিজমি ও বন উজাড় হয়ে যাবে।

ভাটার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশদূষণসহ ধুলাবালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। উজিরপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম ইমাম বলেন, ‘লস্করপুর গ্রামে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপনের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। এর আগে উপজেলা প্রশাসন ইটভাটা বন্ধে যে ভূমিকা রেখেছিল, এবারও আমরা তা দেখতে পাব। অবৈধ ইটভাটাটি বেশি দিন চালু রাখার সুযোগ নেই। দ্রুত সেটি বন্ধ করুন। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরে আবারও যাতে ইটভাটাটি চালুর সুযোগ না থাকে, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিন।