পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার বিষয়টি দিন দিন গৌণ হয়ে পড়ছে। নদী-খাল-বিলের জায়গা দখল ও দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আইন আছে; কিন্তু এর কার্যকর প্রয়োগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে ৫ জুন পালিত হলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সুনামগঞ্জে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি টিলাকে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছেন এক তরুণ। বিষয়টি সত্যিই অসাধারণ এক উদ্যোগ, যা পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আশাবাদী করে তোলে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের চিনাউরা এলাকায় ভারত সীমান্ত ঘেঁষে ওই টিলার অবস্থান। এটির মালিক সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী তরুণ সালেহিন চৌধুরী। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের তাগিদ থেকে সালেহিন চৌধুরী নিজ উদ্যোগে টিলার প্রায় এক একর পাহাড়ি জায়গাকে ঘন জঙ্গলে পরিণত করেন। তাঁর উদ্দেশ্য—পাখি ও বন্য প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয় ও সংরক্ষণ করা। এখন টিলাটি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ও পরিযায়ী পাখি, গুইসাপ, শজারু ও বনমোরগের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।
দেশের অনেক সরকারি বনাঞ্চলেই সংরক্ষণ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে একজন সচেতন নাগরিকের একক প্রয়াসে পরিবেশ রক্ষার এমন উদাহরণ নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণামূলক। স্থানীয় পরিবেশ সংগঠন ‘হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটি’ ও ‘ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর যৌথ আয়োজনে স্থানীয় কিশোর-তরুণদের নিয়ে পরিবেশ রক্ষার শপথ গ্রহণ কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে সেখানে। সালেহিন চৌধুরী হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক। আমরা আশা করি, পরবর্তী প্রজন্মকে প্রকৃতি সংরক্ষণের এই শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমেই গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের সচেতন নাগরিক।
একটি দেশে যে পরিমাণ বনভূমি থাকা দরকার, ততটুকুও নেই বাংলাদেশে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অবাধ বন নিধনের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এই প্রেক্ষাপটে সুনামগঞ্জের এই ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এমন ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা জরুরি। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমেই গড়ে তোলা সম্ভব টেকসই প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
এর আগে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় একটি বন। ব্যক্তি ও যৌথ উদ্যোগে এভাবে বন সৃষ্টি বা অভয়ারণ্য তৈরি অব্যাহত থাকুক। আমরা এসব প্রকৃতি ও পরিবেশপ্রেমী মানুষদের আন্তরিক অভিবাদন জানাই।