সবার জীবনে নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি

সম্পাদকীয়

আজ দিবাগত রাত পবিত্র শবে বরাত। মহিমান্বিত রাত হিসেবে প্রতিবছর হিজরি শাবান মাসের মাঝামাঝিতে মুসলিমরা এটি পালন করে থাকেন। শবে বরাত হচ্ছে ফারসি শব্দ, যার অর্থ মুক্তির রাত। এ রাতে মুসলিমরা মুক্তি, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন। এ কারণে এ রাতের এই নামকরণ।

পবিত্র শবে বরাতে মুসলিমরা নফল ইবাদত করেন। একে হাদিসের ভাষায় বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা অর্ধশাবানের রাত। হাদিসে এ-ও আছে যে এ রাতে আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরককারী ও হিংসুক ছাড়া সব মানুষকে ক্ষমা করেন। ফলে শবে বরাত মুসলিমদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ রাতে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাঁর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করেন।

মুসলিমদের কাছে শবে বরাত ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবেও পরিচিত। হাদিসে এ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি রিজিক দান, সুস্থতা দান, বিপদ থেকে পরিত্রাণের বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সারা বছর এ রাতের জন্য অপেক্ষা করেন। নফল ইবাদতের পাশাপাশি তাঁরা কিছু আনুষ্ঠানিকতাও পালন করে থাকেন। শবে বরাতের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় হয়। অনেকে এ রাতের আগে ও পরে রোজা রাখেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এ রাতের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। শবে বরাত তাঁদের কাছে পবিত্র রমজান মাসের আগমনী বার্তাও। এ রাতের ১৫ দিন পর শুরু হয় রোজা। ফলে শবে বরাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনার প্রস্তুতিও।

এ বছর এমন একসময় শবে বরাত এল, যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ড চলছে। সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এই নৃশংস হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও যুদ্ধবাজ ইসরায়েল অস্ত্র সংবরণ করেনি। শবে বরাতের এই পবিত্র ক্ষণে আমরা গাজার মুসলমান ভাইবোনদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাই।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার অভিঘাত এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। রোজার আগে থেকেই সব ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এটি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। সীমিত আয়ের মানুষ যাতে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারে, সে জন্য টিসিবির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়াতে হবে। যাঁরা সমাজের বিত্তবান শ্রেণির মানুষ, তাঁরা বিত্তহীন ও গরিবদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

সব ধরনের অনাচার থেকে দেশ ও বিশ্বমানবতা মুক্তি পাক এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর করুণা সবার ওপর বর্ষিত হোক, এটিই এ পবিত্র রাতের প্রার্থনা। এ রাতের কল্যাণে সংকটকাল কেটে যাক, আগামী দিনগুলো হয়ে উঠুক কল্যাণময়। শবে বরাত সবার জীবনে নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি।