খেজুরের রস বেচাবিক্রি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রতিবছর শীত মৌসুম আসার আগে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করে থাকেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। এবারও তেমনটি দেখছি আমরা। নিপাহ ভাইরাস রোধে সবচেয়ে বেশি জরুরি জনসচেতনতা। কিন্তু সেটি হচ্ছে কোথায়? গতকাল বুধবার প্রথম আলোর ভেতরের পাতায় প্রকাশিত ফরিদপুর সদরের পিয়ারপুর এলাকার একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, খেজুরগাছে উঠে হাঁড়িতে পাটকাঠি ঢুকিয়ে রস খেয়ে নিচ্ছে একটি শিশু। ছবিটি শীতের গ্রামীণ সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য প্রকাশ করলেও এতে লুকিয়ে আছে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহ ঝুঁকি।

বাদুড়ের লালা বা মলমূত্র দ্বারা দূষিত হওয়া খেজুর বা তালের রস ও তাড়ি থেকে নিপাহ ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার বেশি। ২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেশে ৩৩৯ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এরই মধ্যে মারা গেছেন ২৪০ জন। এ বছরই মার্চ মাস পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ জন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে পাওয়া এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে, নিপাহ ভাইরাস কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে চাইলে কোনোভাবেই খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যাবে না। এমনকি অনেকে বলে থাকেন, রস গরম করে খেলেও এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। একসময় শহর–গ্রামের হাটবাজারে বা ফুটপাতে খেজুরের কাঁচা রস বিক্রি হতো, এখন সেটি চলে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও, সেখানে দেদার বিক্রি হচ্ছে।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। খেজুরের কাঁচা রস এভাবে আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠায় নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি আরও বাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন অনলাইন ব্যবসায়ীদের কে থামাবে? কে বোঝাবে, সবকিছু নিয়ে ব্যবসা করতে নেই? অনেকে বলে থাকেন, মশারি বা জাল দিয়ে সুরক্ষার মাধ্যমে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। কিন্তু তাতেও বাদুড়ের প্রস্রাব বা লালা সেই রসে গিয়ে পড়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। তার মানে খেজুরের রস সংগ্রহ নিয়েও যথেষ্ট সচেতনতার অভাব আছে।

নিপাহ ভাইরাস প্রতিবছর নানাভাবে ডালপালা বিস্তার করছে। যেমন এ বছর দেখা যাচ্ছে শিশু–কিশোরেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, এমনকি মায়ের বুকেও নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সরকারি স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের এখনই নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। জনসচেতনতা তৈরিসহ খেজুর রস বেচাবিক্রি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন ভূমিকা রাখতে পারে।

অনেক জায়গায় হিম বা কুয়াশা উৎসবের নামে কাঁচা রস খাওয়ার আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজন বন্ধ করতে হবে। তবে রস দিয়ে গুড় তৈরিতে যেহেতু কোনো ঝুঁকি নেই এবং গুড়ের চাহিদাও থাকে, মানুষকে গুড়ের ব্যাপারেই বেশি উৎসাহিত করা উচিত।