অচল দুই বিশ্ববিদ্যালয় কবে সচল হবে

সম্পাদকীয়

দেশের দুই প্রান্তের দুই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে। বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকেরা ধর্মঘট পালন করায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও পাঠক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অচলাবস্থা নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৩ দিন (১৫ নভেম্বর পর্যন্ত) ধরে ধর্মঘট পালন করে আসছেন।

তাঁরা উপাচার্য সৈয়দ তাহসিন আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার; তথা নিজের ছেলে, স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সন্তানকে চাকরি দেওয়াসহ নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।

অন্যদিকে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষকেরা টানা সপ্তম দিন কর্মবিরতি পালন করছেন ক্যাম্পাসে হাইটেক পার্ক স্থাপনের প্রতিবাদে এবং শিক্ষকদের জন্য ইউজিসি প্রণীত নির্দেশনা সংশোধনের দাবিতে।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষকদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি শিক্ষকদের ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পরও তাঁরা আন্দোলন করছেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু উপাচার্য মহোদয় নিজের ছেলে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তানদের কী যোগ্যতায় নিয়োগ দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা নেই। এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দাবিটি বড় অদ্ভুত।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময় দলটির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ছাড়া কারও চাকরি হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি আওয়ামী লীগ নেতাদের পোষ্যদের পুনর্বাসনকেন্দ্র? অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা গেছে, যিনিই উপাচার্য হন, তাঁর সন্তান ও আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দেন। তাঁদের পোষ্যরা যদি এতই যোগ্য হয়ে থাকেন, অন্য চাকরি খুঁজে নেন না কেন?

বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষকদের ধর্মঘটের কারণ ভিন্ন। শিক্ষকদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে হাইটেক পার্ক নির্মিত হলে বহিরাগতদের যাতায়াত বাড়বে। এতে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুণ্ন হবে। তাদের এই দাবি অযৌক্তিক নয়। তবে শিক্ষকদের পদায়ন ও পদোন্নতির বিষয়ে ইউজিসির নির্দেশনা সংশোধনের দাবি কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখার বিষয়।

ইউজিসির এই নির্দেশনা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই প্রযোজ্য। গতকাল এ বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসি বৈঠক করেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

কেবল এ দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, নতুন প্রজন্মের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই নানা সমস্যা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত। কোথাও শিক্ষকেরা ধর্মঘট করেন, কোথাও শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। তদুপরি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে অভিজ্ঞ শিক্ষক প্রয়োজন থাকা দরকার, তা-ও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।

এত নেইয়ের মধ্যে কি দেশের উচ্চশিক্ষা চলতে পারে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গত ১৪ বছরে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে।

কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও দক্ষ কর্মকর্তা প্রয়োজন, তা নেই। অনেক বিভাগে অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো শিক্ষক নেই। সহকারী অধ্যাপক বা প্রভাষকদের দিয়ে বিভাগ চালানো হয়।

স্বাভাবিকভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা লেখাপড়া করে বের হন, তাঁরা চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না। তাহলে একের পর এক বেকার তৈরির কারখানা করে কী লাভ।

অবিলম্বে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও বশেমুরবিপ্রবির অচলাবস্থা নিরসন করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। শিক্ষাক্রম বন্ধ রেখে শিক্ষকদের আন্দোলন চলতে পারে না।