সরাইল ও টাঙ্গাইলে প্রাথমিক শিক্ষা বেহাল কেন

সম্পাদকীয়

একটি শিশুকে শিক্ষিত ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম ধাপই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। ফলে এটিকে বলা হয়ে থাকে কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি। গত একান্ন বছরে পাঠ্যপুস্তক, কারিকুলাম, পরীক্ষা ও মূল্যায়নের পদ্ধতি—কত কিছুতেই পরিবর্তন আনা হয়েছে, কিন্তু দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত মজবুত হয়েছে বলা যাবে কি?

যুগোপযোগী ও আধুনিক করতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমান কারিকুলামে আবারও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কিন্তু সেটিও বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে আমরা সহজে আশ্বস্ত হতে পারি না। কারণ, শিক্ষা সংস্কার অনুসারে কতটা যোগ্যতা ও মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরি হচ্ছেন?

সময়মতো শিক্ষকদের নিয়োগ না হওয়া, পদায়নে সমন্বয়হীনতাসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাত, যার বড়

নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায়। এসব উপজেলার ৪৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের অনেক পদও শূন্য। এমন পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার হার কমে যাচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শিক্ষকেরা অবসরে যাচ্ছেন কিন্তু শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। আবার সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শহর বা শহরতলির স্কুলগুলোতে পদ শূন্য হলে অন্য এলাকা থেকে বদলি করে পদ পূরণ করা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে তা শূন্যই থেকে যাচ্ছে।

আবার যেখানে যাতায়াতের সুবিধা ভালো, সেখানে অধিক শিক্ষক রাখা হয়েছে; যেখানে যাতায়াতে অসুবিধা, সেখানে কম শিক্ষক রাখা হয়েছে। অভিযোগ আছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরের কারণে পদায়নে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ফলে দেখা যাচ্ছে, শতাধিক শিক্ষার্থীর এক বিদ্যালয়ে চার শিক্ষকের পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন একজন। যাঁকে ঘণ্টা দেওয়া থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজসহ সব কটি শ্রেণির পাঠদান একাই সামলাতে হয়।

আবার কোনো বিদ্যালয়ে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য সাতটি পদের বিপরীতে আছেন চার শিক্ষক। আবার কোথাও ৩৫০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রাখা হয়েছে ৯ থেকে ১০ জন। জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, গোটা বিষয়টি অধিদপ্তরই নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁরা নিয়মিত শূন্য পদের বিষয়টি লিখে আসছেন।

শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইল নয়; অনেক জেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় এমন সংকট বিরাজ করছে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করুন। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের পদায়নে ও প্রেষণে পাঠানোর ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা দূর করুন।