বালু তোলার ইজারা বাতিল করুন

ব্যক্তিস্বার্থ আর জনস্বার্থ দুই জিনিস। রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বভাবত নিজেদের জননেতা তথা জনস্বার্থ সংরক্ষক হিসেবে পরিচয় করাতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থের প্রবল প্রবাহে প্রায়ই তাঁদের জনস্বার্থ সংরক্ষণসূচক যাবতীয় প্রতিশ্রুতি ভেসে যায়। জনস্বার্থের উকিল তখন ব্যক্তিস্বার্থের রক্ষক হয়ে ওঠেন। 

মানিকগঞ্জে কালীগঙ্গা নদী থেকে রাজনৈতিক নেতার বালু উত্তোলনে সাধারণ মানুষের ফসলি জমি বিলীন হওয়ার ঘটনা ব্যক্তিস্বার্থ ও জনস্বার্থের সেই সাংঘর্ষিক অবস্থা সামনে নিয়ে এসেছে। 

মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ধারমানিক ও জয়নগর এলাকায় কালীগঙ্গা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলছে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, বেপরোয়াভাবে বালু তোলায় একের পর এক কৃষিজমি ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। 

এটি ঠিক যে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বিধিবদ্ধভাবে ইজারা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি ইজারা নিলেও তারা অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা মানববন্ধন করে এই বালুমহালের ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। 

ইজারাদার জাহিদুল স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতা। সেই সূত্রে বলা যেতে পারে, জনস্বার্থের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁকে বিপরীত অবস্থানে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, তিনি বৈধভাবে ইজারা নিয়ে নির্ধারিত স্থান থেকে বালু তুলছেন। বালু তোলার কারণে সেখানে নদী ভাঙছে না বলেও তিনি দাবি করেছেন। 

ওই আওয়ামী নেতার বক্তব্য ভুল নাকি সঠিক, তা বিচারের চেয়ে অবিলম্বে বালু তোলা স্থগিত করে নদীভাঙনের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান জরুরি। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, ক্ষতির শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এখনই এই ভাঙন বন্ধ করতে না পারলে সেটিকে স্থানীয় মানুষ সরকারি কাঠামোগত ক্ষতিকারক উদ্যোগ বলে মনে করতে পারে। এরপর প্রশাসনের দিক থেকে ক্ষতির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলে সেই সমবেদনাকে অসহায় কৃষকদের সঙ্গে সরকার ও প্রভাবশালীদের স্থূল পরিহাস বলে মনে হতে পারে। 

ইজারাদার জাহিদুল যেহেতু একজন স্থানীয় রাজনীতিক, সেহেতু জনস্বার্থের বিষয়টিকে তাঁর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তাঁর নিজেরই বালু তোলা বন্ধ করা উচিত। আর স্থানীয় মানুষের আবেদনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে জনস্বার্থে এই এলাকাগুলো বালুমহাল ইজারার অন্তর্ভুক্ত না করা উচিত।