কবে আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে

রাজধানী ঢাকা শহরের বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত পশু জবাই হয়। যেনতেনভাবে যত্রতত্র পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই, পশুর স্বাস্থ্যগত দিক যাচাই না হওয়ায় ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগও থেকে যায়। এর সমাধান হতে পারে আধুনিক পশু জবাইখানা।

কিন্তু এত বছরেও দুই কোটি বাসিন্দার এ বিশাল শহরে সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। ঢাকা উত্তর সিটির গাবতলীতে উদ্যোগ নিয়েও সেটি শুরু করা যায়নি। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটিতে শতকোটি টাকা খরচ করে দুটি আধুনিক জবাইখানা নির্মিত হলেও সেগুলো পড়ে আছে।

প্রকল্প অনুমোদন, বরাদ্দ ছাড় ও ঠিকাদার নিয়োগ পর্যন্ত সবকিছুই এ দেশে ঠিকঠাক থাকে কিন্তু বাস্তবায়নকালে হয়ে পড়ে গুরুত্বহীন ও অবহেলিত। এমন দশা রাজধানীর দুটি জবাইখানার ক্ষেত্রেও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে যথাক্রমে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দুটি আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দুই–আড়াই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা পুরোপুরি করেননি ঠিকাদার।

সিটি করপোরেশনও বিষয়টিকে সেভাবে ছেড়ে দিয়েছে। অথচ পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই কিনে ফেলা হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এখন সেগুলো যাতে নষ্ট না হয়, এ জন্য প্রতিদিন দুই বেলা চালু রাখা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, একটি গোষ্ঠীকে আর্থিক সুবিধা আদায় করে দিতে তড়িঘড়ি করে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে এ কেমন সংস্কৃতি তৈরি হলো এ দেশে!

জবাইখানা দুটি চালু হলে দক্ষিণ সিটির ৪০ ভাগ এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু জবাই করা যাবে। অন্যদিকে উত্তর সিটিতে কোনো আধুনিক জবাইখানা এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে রাজধানীর মোট ১২৯টি ওয়ার্ড শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত ও আধুনিক জবাইখানার আওতায় আসবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এখন কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই হয়। ফলে যদি অসুস্থ বা মৃত পশুর মাংস বাজারে বিক্রি করা হয়, সেটি রোধ করার সুযোগ নেই।

তবে ব্যবসায়ী ও কসাইরা জবাইখানা ব্যবহার করতে ইচ্ছুক কি না, সে প্রশ্নও থেকে যায়। তবে আধুনিক সুব্যবস্থার বিষয়টি তাঁদের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করাটা জরুরি। ধীরে ধীরে তঁাদের বিষয়টির প্রতি আকৃষ্ট ও অভ্যাসে পরিণত করার জন্য সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে হবে। তার আগে দুই সিটির জন্য পর্যাপ্ত জবাইখানা চালু করা প্রয়োজন; সেটি কী করে সম্ভব যেখানে দক্ষিণ সিটির এ দুটি জবাইখানা এত দিনেও চালু করা গেল না?