দায়ীদের বরখাস্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করুন

তদন্তকারীরা রাজধানীর উত্তরায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর ২০০ ভরি সোনা লুটের ঘটনায় পুলিশের তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব অপরাধীদের দমন করা, তাঁরাই যদি এ ধরনের লুটের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে প্রতিকার চাইবে? 

প্রথম আলোর খবর থেকে আরও জানা যায়, সোনা লুটের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। ওই এসআইসহ পুলিশের আরও এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নেতৃত্বে সোনা লুট করা হয়েছে।

লুটের ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ দত্ত জানান, টঙ্গী বাজারের সোনালী মার্কেটে তাঁর শিল্পী জুয়েলার্স নামে একটি দোকান রয়েছে। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে গলিয়ে আনা ২০০ ভরি সোনা নিয়ে তাঁর ভায়রার ছেলে অনীক ঘোষ দোকানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউছুল আজম অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস তাঁর সামনে দাঁড়ায়। সেখান থেকে চারজন নেমে ডিবি পরিচয়ে অনিককে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নেন। তাঁর কাছ থেকে ২০০ ভরি সোনা ও মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মেট্রোরেলের উত্তরা স্টেশনের কাছে ফেলে যান।

পরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ২৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি শ্রীপুর থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত। সোনা লুটের এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অপর পাঁচজন হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন (লিটন), গোলাম সারোয়ার (৪৯), আনিস মোল্লা (৩০), সুজন চন্দ্র দাস (২৯) ও আমির। তাঁদের মধ্যে আমির ছাড়া বাকি চারজন এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে সিআইডি কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে ডিবি পুলিশ দেড় কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে বলেও খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। 

এই চক্রে পুলিশের তিন সদস্য ছাড়া আরেক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিমানবন্দর সড়কে আটকে মালামাল লুটে নেওয়ার ঘটনায়ও এই চক্র জড়িত বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন। 

এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাময়িক বরখাস্ত করা যথেষ্ট নয়। সরকার যদি আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ন্যূনতম জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে অবিলম্বে এ ধরনের অপরাধীদের বাহিনী থেকে বরখাস্ত করতে হবে। সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশসহ তদন্ত সংস্থার কাজই হচ্ছে অপরাধ দমন এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা। কিন্তু পুলিশ সদস্য হয়ে যদি কেউ স্বর্ণ ডাকাতির মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। 

দুটি কারণে এটি করা প্রয়োজন। প্রথমত, ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়া। দ্বিতীয়ত, অভিযুক্ত ব্যক্তি বাহিনীতে থাকলে বিচারকাজ প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

পুলিশ বা র‍্যাব সদস্যদের এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অনেক ঘটনা ঘটছে; যদিও সব ঘটনা জনসমক্ষে আসে না। অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে ভয় পান। অনেক সময় প্রতিকার চাইলেও কোনো কাজ হয় না। এটা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় থেকে যাঁরা অপরাধমূলক কাজ করেন, তাঁদের ওই বাহিনীতে থাকার নৈতিক ও আইনি অধিকার নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।