নীলফামারী–লালমনিরহাটে আর কত দুর্ভোগ

সম্পাদকীয়

আমাদের দেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। আর একবার একটি সড়ক নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার উন্নয়নের চলমান একটি বিষয়। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে আমাদের সড়কগুলো যথেষ্ট টেকসই হয় না। অধিক বরাদ্দে সড়ক নির্মাণের পরও নানা সমালোচনা থেকে যায়। আর একটি সড়ক নির্মাণের পর সংস্কারের সময় চলে আসে। সংস্কার কার্যক্রম নিয়েও তৈরি হয় নানা প্রশ্ন। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি নীলফামারীর ডোমার-বসুনিয়ার হাট প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারকাজ নিয়ে।

নীলফামারীর এ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। এ জন্য বরাদ্দ ধরা হয় প্রায় ৯ কোটি টাকা। কিন্তু এখনো সড়কটির কাজ শেষ না করে ফেলে রাখায় মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটছে না, বরং আরও বেড়েছে। বসুনিয়ার হাট অত্র অঞ্চলের ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রসিদ্ধ এলাকা হওয়ায় প্রতিদিনই ওই পথে ভারী যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে পরিবহন খরচ বেশি দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়কটির কাজ শুরুর আগে কিছু অংশ ভাঙা থাকলেও বেশির ভাগ অংশ চলাচল করার মতো ছিল। অনেকটা ভালো রাস্তায় ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। এরপর সড়কটির এমন বেহাল হয়েছে যে এখন ভ্যান–রিকশাও চলছে ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় প্রতিনিয়ত ওই সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঠিকাদারের বক্তব্য, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কটির কাজ করতে গিয়ে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দর পুনর্নির্ধারণ না করায় তাঁরা এখন কাজটি করতে চাইছেন না।

ডোমার উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলীর বক্তব্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক বছর ধরে পত্র দেওয়া হচ্ছে, তারা কোনো জবাব দিচ্ছে না। এখন কাজটির বাতিল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এটি বাতিল করার পর ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করব, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পরবর্তী সময়ে রাস্তার কাজ সেই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার বিষয়টিও পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে বিবেচনা করা হয়।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের অবস্থাও খুবই করুণ। ১০ কিলোমিটারের সড়কটির সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা বুড়িমারী ইউনিয়নের মেডিকেল মোড় থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের সংযোগস্থল বাঁশকল এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে। স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি আরও বেহাল হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্য বাজারে তুলতে গিয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

পাটগ্রাম এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত ওজনের ভারতীয় পণ্যের ট্রাক আঞ্চলিক সড়কে চলাচল বন্ধ করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হলেও কাজ হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ছাড়া সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।