বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে যে বৈষম্য আছে, তা নিয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনা হলেও সেটি কমানোর উদ্যোগ নেই। শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পদ না থাকতেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ক্যাডার–বৈষম্য ও পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে এক দিনের ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে ২ অক্টোবর দেশের সব সরকারি কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, দাবি পূরণ না হলে ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর কর্মবিরতি পালন করা হবে।
‘সর্বাত্মক’ কথাটি এত দিন রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। সর্বাত্মক হরতাল, সর্বাত্মক আন্দোলন ইত্যাদি। সেই ধারায় এখন সরকারি কর্মকর্তারাও যুক্ত হয়েছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের অনড় অবস্থানকেই বোঝাতেই চাইছেন।
এর আগে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে সুপারনিউমারারি (সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি এবং অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড তৃতীয় ধাপে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছিল। সমিতির অভিযোগ, শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ ‘দখলের মানসে’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা করা হয়েছে। তাঁরা একে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার বিধিমালার পরিপন্থী’ আখ্যায়িত করে তা বাতিল ও শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডারের বাইরের কর্মকর্তাদের সরানোর দাবি জানান।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির দাবি অনুযায়ী, পদোন্নতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এ মুহূর্তে পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন সাত হাজার কর্মকর্তা। সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ায় অনেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবেই অবসরে যাচ্ছেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৯০ জনের পদোন্নতি হয়েছে, অথচ এই পদে ৩ হাজারের মতো কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য।
যেখানে প্রশাসনের অনেক বিভাগে পদ না থাকতেও পদোন্নতি দেওয়া হয়, সেখানে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে রাখার কোনো যুক্তি নেই। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক কর্মসূচির অর্থ হলো এই সময়ে শিক্ষকেরা পাঠদান থেকে পুরোপুরি বিরত থেকেছেন, কর্মকর্তারা অফিসে গেলও দাপ্তরিক কাজ করেননি। দাপ্তরিক কাজ এক দিন না হলে অন্য দিন করে সেটি পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু এক দিনের পাঠদান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, সেটা শিক্ষার অভিভাবকদের জানা উচিত।
সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছেন, তা যৌক্তিক। পরবর্তী কর্মসূচির আগেই কর্তৃপক্ষের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটি ফয়সালা করা। পরপর তিন দিন শিক্ষকেরা সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন করলে শিক্ষার যে বড় ক্ষতি হবে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। গণসাক্ষরতা অভিযানের এক জরিপে দেখা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বড় অংশ করোনা মহামারির শিক্ষণক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি। উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রতি সরকার কিংবা শিক্ষার অভিভাবকদের উপেক্ষা ও উদাসীনতা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।