শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করা যাবে না

সম্পাদকীয়

যেখানে একজন শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী–সংকটের খবরটি বিস্ময়কর বটে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, আগামী ৫ জুন প্রথম বর্ষ এমবিবিএস ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বহু আসন খালি আছে। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ১ হাজার ২০০ আসন খালি থাকবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, খালি আসনের সংখ্যা ৬৩৫।

সংখ্যার বিতর্কের চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারছে না কেন? বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকেরা অটোমেশন পদ্ধতি বাতিলের কথা বলছেন। অটোমেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মানক্রম অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হয় এবং তাদের তিনটি কলেজ পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যেসব মেডিকেল কলেজকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন না, সেগুলোর আসন খালি থাকে।

শিক্ষার্থী ভর্তির সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনামের নিগূঢ় সম্পর্ক আছে। যেসব মেডিকেল কলেজ ইতিমধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীরা বেছে নেবেন।

অটোমোশন ভর্তিপদ্ধতি চালু হওয়ার আগে মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যেত। অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বেশি টাকা নিয়ে কম মানক্রমের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করত, বেশি মানক্রমের শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে। কিন্তু অটোমোশন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এসব অনিয়ম বন্ধ হয়েছে। কোন মেধাক্রমের শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন, কোন কলেজ কোন মেধাক্রমের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাচ্ছে, তা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ সহজেই জানতে পারে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি, এর আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি, এগুলোর আসন সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন ৩ হাজার ৫৫১টি। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ৭৪২টি আসন। দেশি ও বিদেশিদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের ১৯ শতাংশ খালি আছে। উল্লেখ্য, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আয়ের প্রধান উৎস শিক্ষার্থী ভর্তির অর্থ। একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ ফি বাবদ পায় ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। কোনো কোনো কলেজ ভর্তি থেকে আয় করে বছরে ২০ কোটি টাকার বেশি।

সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষ হওয়ার পর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়। সরকারি ও বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। মেধাক্রমের ওপরের দিকে থাকা শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজে ভর্তি হন। ফলে নতুন পদ্ধতিতে বেসরকারি ভালো কলেজগুলোর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

যেসব মেডিকেল কলেজের উদ্যোক্তারা এখনআসন নিয়ে খালি নিয়ে বিচলিত, তাঁরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান বাড়ানের উদ্যোগ নিলেন না কেন? চিকিৎসা বিজ্ঞান এমন বিশেষায়িত শিক্ষা, যেখানে বেশির ভাগই হাতে–কলমে শিখতে হয়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও উপযুক্ত শিক্ষক ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চলছে ন্যূনতম ভৌতকাঠামো ও দক্ষ জনবল ছাড়াই।

বেশ কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া তথা ভর্তি বন্ধ করার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিছু মেডিকেল কলেজে আসন খালি আছে— এই অজুহাতে শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করা যাবে না। করা সমীচীনও নয়।