চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) সাম্প্রতিক র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় নিয়মিত ঘটে যাওয়া এমন কর্মকাণ্ড বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন র্যাগিংয়ের মতো ঘৃণ্য সংস্কৃতি বিরাজ করে, তখন শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
চলতি মাসে চুয়েটের ২৩তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রধান ফটকের বাইরে ইমাম গাজ্জালী কলেজের সামনে নিয়ে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১১ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
র্যাগিং নিছক আনন্দ বা পরিহাস নয়। এটি মূলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের এমন এক ঘৃণ্য রূপ, যা ভুক্তভোগীদের আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব বিকাশকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ কিংবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। কখনো তা শারীরিক নিপীড়ন, কখনো মানসিকভাবে হয়রানি কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং কিছু ক্ষেত্রে এর মাশুল দিতে হয়েছে জীবন দিয়ে। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড এই বাস্তবতারই করুণ চিত্র।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এমন সংস্কৃতির পেছনে মূলত প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, র্যাগিংয়ে জড়িত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট। ক্ষমতার জোরে তাঁরা কোনো শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যান। ২০২০ সালে উচ্চ আদালত র্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এই নির্দেশ কার্যকর করেনি। প্রচলিত আইনেও র্যাগিং নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। এটি অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করে।
এই সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। র্যাগিং বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং প্রতিরোধে কার্যকর কমিটি গঠন ও এর নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করা জরুরি। অপরাধীদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। র্যাগিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানাতে নিয়মিত কর্মশালা এবং সেমিনারের আয়োজন প্রয়োজন।
শিক্ষার পরিবেশকে সুরক্ষিত করতে হলে প্রশাসন, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধ করা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নয়; এটি সবার সামাজিক দায়িত্বও। এ বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেবল ভয়ের জায়গা হয়ে উঠবে, যা জাতির অগ্রগতির জন্য চরম ক্ষতিকর।