রাঙামাটিতে জনদাবি উপেক্ষার সুযোগ নেই

তীব্র তাপপ্রবাহে সবুজের গুরুত্বই বেশি আলোচনায় এখন। পরিবেশের ওপর কী পরিমাণ নিপীড়ন চালানো হয়ে আসছে, সেগুলোর নানা নমুনা উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। বিশেষ করে সরকারি উন্নয়নে কোথায় কোথায় গাছ কাটা হয়েছে, সেই সমালোচনা চলছে। এরই মধ্যে রাঙামাটিতে একটি শতবর্ষী বটগাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যদিও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে গাছটি কাটা সম্ভব হয়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাঙামাটি শহরের পূর্ব ট্রাইবেল আদাম এলাকায় প্রায় দুই শতক জমিজুড়ে বিশাল বটগাছটির অবস্থান। সেখানকার কয়েকটি প্রজন্ম বড়ই হয়েছে এ গাছ দেখে। চারপাশের অনেক দূর পর্যন্ত বটগাছের ডালপালা বিস্তৃত থাকায় সেখানে তপ্ত গরমেও ঠান্ডা ছায়া ও বাতাস থাকে। সে কারণে এলাকার মানুষের এক প্রকার মিলনস্থল বলা যায় বটতলাকে। কিন্তু সম্প্রতি বটগাছটি কাটার চেষ্টা চলছে। এর জন্য একাধিকবার প্রশাসন থেকে লোকজনও এসেছে।

সরকারি উন্নয়নের কারণেই গাছটি কাটতে চায় প্রশাসন। ওই এলাকার ৫০ শতক জমি তথ্য ভবনের জন্য প্রশাসন অধিগ্রহণ করেছে। সেই জমির মধ্যে পড়েছে বটগাছটিও। এখন তথ্য ভবন নির্মাণের জন্য বটগাছটি কাটতে প্রশাসন এ পর্যন্ত চারবার উদ্যোগ নেয়। প্রতিবারই ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার এমন ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ বটগাছটি রক্ষা করতে জড়ো হয়েছেন। 

সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কত গাছ কাটা পড়ছে—ছবিসহ এমন প্রতিবেদন আমরা হামেশা দেখি সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু সেসব গাছ রক্ষার জন্য খুব কমই আন্দোলন দেখা যায় স্থানীয় মানুষের। সেখানে রাঙামাটিতে একটি বটগাছ রক্ষায় যে জনবিক্ষোভ, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। 

জমির মালিকপক্ষ জানাচ্ছে, তাদের ৫০ শতক জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। জমি পরিমাপ করে ২ শতক কম পাওয়া যায়, বটগাছটি কাটলে সেই ২ শতক জমি বের হয়ে আসবে। এখন মাত্র ২ শতক জমির জন্য শতবর্ষী বিশাল এক বটগাছ কেটে ফেলা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত হতে পারে না। শত বছর ধরে পরিবেশে যে অমূল্য অবদান রেখে আসছে এ বটগাছ, তার বিনিময় অন্য কিছু কি হতে পারে? গাছ কাটার পরে অন্য গাছও যদি লাগানো হয়, সেটিও কি শতবর্ষী গাছের সমান হতে পারে?

আমরা চাই না, রাঙামাটির শতবর্ষী এ গাছ কাটা পড়ুক। এখানে জমির মালিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরোধের কথা বলে কোনোভাবেই বিষয়টিকে ঘোলাটে করে তোলার সুযোগ নেই। আমরা দেখতে চাই স্থানীয় প্রশাসন পরিবেশ সুরক্ষা ও জনমতকে কতটা গুরুত্ব দেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সুবুদ্ধির উদয় হোক।