এত প্রকল্প নিয়ে কী লাভ হলো

সম্পাদকীয়

অধিক কায়িক শ্রম শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পরিপন্থী। আবার সেটি যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে শিশুর বিকাশ যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি নানা রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। এ কারণে আইনে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকারের নানা উদ্যোগ-আয়োজন সত্ত্বেও দেশে শিশুশ্রম কমছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, এক দশকে দেশে শিশুশ্রমিক বেড়েছে প্রায় এক লাখ। দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ শিশুশ্রমিক আছে। এদের প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। প্রকৃতপক্ষে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার শিশুশ্রম নিরসনে নানা উদ্যোগ নিলেও সেটি সফল হয়নি। নতুন করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে যে শিশুশ্রমমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। এখন ২০২৪ সালের মে মাস। হাতে সময় আছে মাত্র ১ বছর ৭ মাস। এই স্বল্প সময়ে শিশুশ্রম বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঝুঁকিমুক্ত কাজের মাধ্যমে আয়ের পথ করে দিতে ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ শিশুকে ৯টি বিষয়ের ওপর ছয় মাসের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাসের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে এ প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি; অর্থাৎ যেখানে সরকারের বেশি নজর দেওয়া দরকার ছিল, সেটাই উপেক্ষিত থেকে গেছে। এর আগেও এ রকম একাধিক প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।

ফলে সরকার যে নতুন করে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে যাচ্ছে, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে দেখতে হবে, আগের প্রকল্পগুলোতে কতজনকে শিশুশ্রম, তথা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে মুক্ত করা গেছে? সেগুলোর লক্ষ্য অর্জিত না হলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

মনে রাখতে হবে, দারিদ্র্যের কারণেই এসব শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা ঝুঁকিমুক্ত শ্রম দিতে বাধ্য হয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকার একটি ঝুঁকিপূর্ণ খাত থেকে কিছু শিশুকে সরিয়ে নিলে কিছুদিন পর তারা আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে অথবা করতে বাধ্য হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শুধু প্রশিক্ষণ দিয়ে কিংবা প্রকল্প নিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে কার্যপরিধি ঠিক করা হোক। প্রকল্প বাস্তবায়নের পুরোনো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।