গোটা দেশের নদী–খালগুলোতে বালুখেকোদের আধিপত্য দিন দিন আরও গেড়ে বসছে। এখানে রাজনীতি ও ক্ষমতাচর্চা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে বালুখেকোদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো এত সরব হলেও কোনোভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। মানিকগঞ্জে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তঁারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে অভিযান চালিয়েও তঁাদের থামানো যাচ্ছে না।

নদীকেন্দ্রিক জনপদগুলোর আজীবনের দুঃখ নদীভাঙন। অবাধে বালু তোলা সেই দুঃখকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বেপরোয়া বালুখেকোদের দৌরাত্মে্য পদ্মাপারের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঢাকার দোহার ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার এসব এলাকায় ভাঙনে প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এসব জিও ব্যাগ ফেলে কত দিন ভাঙন ঠেকিয়ে রাখা যাবে? 

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দোহার থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের নেতা মোক্তার হোসেন। মানিকগঞ্জ জেলা থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান। ফরিদপুর থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চরভদ্রাসনের ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বদরউদ্দিন মৃধা। বালু লুটপাটের জন্য তাঁরা নিজেরাই আবার পরস্পরকে দোষারোপ করছেন।

বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে গত ২৯ আগস্ট তোপের মুখে পড়েন হরিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া ও তাঁর দলের সদস্যরা। বালু ব্যবসায়ীদের লোকজন তাঁদের স্পিডবোট একপ্রকার জিম্মি করে রাখে। পরে দোহারের সহকারী কমিশনার এস এম মোস্তাফিজুর রহমান সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করেন। কতটা বেপরোয়া হলে প্রশাসনকেও তোয়াক্কা করেন না এসব বালু ব্যবসায়ী। 

এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলে কি তঁাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না? নদীর ক্ষতি হতে থাকবে, ভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ ভিটাহীন হয়ে যেতে থাকবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডও ভাঙন ঠেকাতে নানা প্রকল্প নিতে থাকবে—এভাবেই কি চলতে থাকবে? বালুখেকোদের কোনোভাবে ছাড় নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নিলে অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাঁদেরকে থামাতে প্রশাসনিকভাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হোক। ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো জব্দ করা হোক। আমরা আশা করব, ক্ষমতাসীন দলও তাদের এসব নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেবে।