সিলেটে খাল দূষণমুক্ত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

একেকটি নদী বা খাল মরে যাওয়া মানে কৃষকের দুর্দশা বেড়ে যাওয়া। শুধু তাই নয়, এতে গোটা জনপদে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশে যতই শিল্পায়ন ঘটছে, ততই দূষিত হচ্ছে নদী ও খাল।

এর জন্য আইন বা নীতিমালা থাকলেও সেগুলো কিছুই মানা হচ্ছে না। যেমনটি আমরা দেখছি সিলেট সদর উপজেলায় খাদিমপাড়া ইউনিয়নে। সেখানকার বালুটিকর খালটি ছিল একসময় ইউনিয়নের তিনটি হাওরের বোরো ধানের একমাত্র পানির উৎস।

কিন্তু বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) খাদিমনগরের বিভিন্ন কারখানার ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে খালটির আজ মরণদশা। রীতিমতো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে সেটি। এতে সবচেয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছে কৃষক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, একসময়ের স্বচ্ছ জলধারার খালটির পানি এখন আলকাতরার রং ধারণ করেছে। এ খালের পানি নিয়ে জমিতে ফেললে সবজি ও ধানগাছ কয়েক দিন পর মরে যাচ্ছে। খাদিমপাড়ায় এখন ধান আর সবজি চাষ হয় না বললেই চলে। একসময় এ খালের সুপেয় পানি দিয়ে খাবার রান্না, গোসল সবই করতেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। মাছ ধরেও অনেকের জীবিকা নির্বাহ হতো। এখন দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রবের কারণে সেখানে মানুষের টেকা দায় হয়ে পড়েছে।

খাদিমনগর বিসিকের বেশ কিছু কারখানায় বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনা (অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট-ইটিপি) নেই। তার মানে কারখানাগুলোর বর্জ্য সরাসরি খালে গিয়ে মিশছে।

এর ফলে যে পরিবেশদূষণ হচ্ছে, সেটি আর খাদিমপাড়ায় সীমাবদ্ধ নেই, পাশের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফছর আহমদ বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিসিকের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনেকবার বসেছি। কিন্তু বিসিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

যদিও বিসিক কর্তৃপক্ষের দাবি, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির ময়লা–আবর্জনাও খালটি দূষণের জন্য দায়ী। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের বক্তব্য, বিসিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের ইটিপি বাধ্যতামূলক, তার বেশির ভাগের ইটিপি আছে। যাঁদের ইটিপি করা হয়নি, তঁাদের দ্রুত তা করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে বালুটিকর খালের পরিবেশদূষণের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এটি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তঁাদের এমন বক্তব্য হতাশাজনক। একটি খাল দূষণে মরে যেতে বসেছে, সেটি তাঁরা জানেনই না। আর এত দিন ধরে কেন বিসিকের কারখানাগুলোকে ইটিপি চালু করতে বাধ্য করাতে পারেননি তঁারা? এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনও এখানে বড় ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন খালুটি দূষণমুক্ত করতে দ্রুত যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।