অটোরিকশাচালক রনি হোক সবার অনুপ্রেরণা

সম্পাদকীয়

প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমাদের আফসোসের শেষ নেই। যাঁরা এর রক্ষাকারী, তাঁদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। তবে এটি শুধু সরকারি সংস্থার একার দায়িত্ব নয়। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে মানুষকেও। নদী, গাছপালা, পশুপাখি—সব এ প্রকৃতিরই অংশীদার। এখানে সচেতন মানুষের দায় বেশি হলেও বরাবরই তাঁরা থাকেন পিছিয়ে। তাঁদের জন্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একজন অটোরিকশাচালক রনি হতে পারেন দারুণ অনুপ্রেরণা।

রনি এক পাখি বিক্রেতার কাছ থেকে মাছরাঙার চারটি ছানা উদ্ধার করেছেন। ঘটনা হিসেবে ছোট হলেও এর তাৎপর্য বড়ই বলতে হবে। মাত্র চারটি পাখির ছানাকে উদ্ধার করতে রনির যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, তা আমাদের মুগ্ধ করে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রনি গত শনিবার যাত্রী নিয়ে শ্রীমঙ্গলের নন্দরানী চা-বাগানে গিয়েছিলেন।

সেখান থেকে ফেরার পথে নন্দরানী চা-বাগানের রাস্তার পাশে মাছরাঙার ছানা বেচাকেনার দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ে। পাখিগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও পাখি বিক্রেতা রাজি হননি। এতেও তিনি দমে যাননি। ছানাগুলোকে উদ্ধারের জন্য নিজের পকেটে থাকা ৪০০ টাকা দিয়ে রনি পাখিগুলো কিনে নেন।

একজন অটোরিকশাচালক সারা দিন গাড়ি চালিয়ে কতই-বা আয় করেন। ফলে বোঝাই যায়, রনি তাঁর আয়ের বড় অংশই খরচ করতে দ্বিধা করেননি পাখির ছানাগুলোকে বাঁচাতে। রনি প্রকৃত অর্থেই পাখিপ্রেমিক। ছানাগুলোকে তিনি বাড়িতে না গিয়ে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।

বন বিভাগ ছানাগুলোকে দেখভালের জন্য শ্রীমঙ্গলের বন্য প্রাণী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফের (এসইডব্লিউ) কাছে দিয়েছে। সংগঠনটির অস্থায়ী সেবাকেন্দ্রে ছানাগুলো আছে এখন। সেগুলো এখনো একদম ছোট। বয়স আনুমানিক ২০ দিন। উড়তে সক্ষম হলে ছানাগুলোকে বনে অবমুক্ত করা হবে।

যে ব্যক্তি পাখির ছানা বিক্রি করছিলেন, তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁকে ধরার সুযোগ নেই। এটি আশঙ্কার বিষয় যে সিলেট অঞ্চলে পাখি শিকার ও বিক্রি কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না।

পাহাড়, নদী ও হাওর-বাঁওড়ের অঞ্চলটিকে পাখির স্বর্গরাজ্য বলা যায়। সে কারণে পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্যও সেখানে বেশি। পরিযায়ী পাখি তাদের শিকার হয় বেশি। সেসবের মাংসও হোটেলে বিক্রি হয়। পাখি শিকারের জন্য পেশাদার শিকারি গোষ্ঠীও আছে।

পাখি শিকার বন্ধ করতে ও শিকারিদের ধরতে সরকারি কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে এ কাজে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন, তরুণসমাজ ও তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে।