অর্থনৈতিক চাপে মানুষ এখন দিশাহারা। প্রতিনিয়ত নানা শঙ্কায় কাটে জীবন। এর মধ্যে বন্যার ধাক্কা ও নদীভাঙন কিছু এলাকার মানুষকে আরও বেশি বিপর্যস্ত করে তুলেছে। প্রায় দিনই বাঁধের জন্য মানুষের আকুতির খবর আমরা পাই। কোথাও জোয়ারের কারণে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও নদীভাঙনে গোটা জমিই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় এমন ভাঙন আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেখানকার ঘাঘট নদের ২০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙনে উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার অনেক আবাদি জমি ও বসতভিটা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসী নানাভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে ধরনা দিলেও তারা কোনোভাবেই বিষয়টি কানে তুলছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মিঠাপুকুরের ঘাঘটপাড়া এলাকায় এক মাসের ব্যবধানে ২৫ ব্যক্তির আবাদি জমি ভাঙনের শিকার হয়ে বিলীন হয়ে গেছে। নদ এখন ভাঙতে ভাঙতে কয়েকজনের ঘরবাড়ির কিনারে চলে এসেছে। যেকোনো সময় সেসব ঘরবাড়িও নদগর্ভে চলে যেতে পারে। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঈদগাহ মাঠসহ আরও ১৫টি বাড়ি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাউবো ও সিটি করপোরেশনকে বারবার জানানোর পরও ভাঙন প্রতিরোধে এক বস্তা বালুও ফেলা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। পাউবোর রংপুর কার্যালয়ে গিয়ে দাবিও জানিয়ে আসেন তাঁরা। নদের ভাঙন থেকে বসতভিটা, মসজিদ ও আবাদি জমি রক্ষার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য (রংপুর-৫) এইচ এন আশিকুর রহমানও এলাকাবাসীর পক্ষে পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর চিঠি পাঠান। এতেও পাউবোর বোধোদয় হয়নি। ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি ও জমি হারানো মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ঘাঘট নদের ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ঘাঘট নদ ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ওই প্রকল্প সমীক্ষা পর্যায়ে আছে।’ কিন্তু এই সমীক্ষা কখন শেষ হবে, এরপর কখন প্রকল্পটি শেষ হবে, ততক্ষণে কত মানুষকে ঘরবাড়ি আর জমি হারাতে হয়—এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। তঁাদের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘাঘটপারের এসব মানুষের অসহায়ত্ব ঘোচানোর জন্য কী করছে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।