বোরো ধানের ভান্ডারের এ হাল কেন

সম্পাদকীয়

আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পরিবেশের বিষয়টি বারবার উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। একটি ভবন তৈরিতে কিছু গাছ কাটা পড়বে, একটি সড়ক নির্মাণে একটা খাল ভরাট করা হবে, একটি সেতুতে নৌপথ মরে যাবে, একটি বাঁধ নির্মাণে বিল শুকিয়ে যাবে—এসবই যেন এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এভাবে আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষও। যেমনটি আমরা দেখছি যশোরের কাঠুরিয়া বিলের ক্ষেত্রে। একটি সড়কসেতুর জন্য বাঁধ দেওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় বিলটিতে ৯ বছর ধরে ধান চাষ হচ্ছে না। কৃষি ও কৃষকের এমন ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কাঠুরিয়া বিলের বুক চিরে প্রবাহিত একই নামে একটি খাল। খালটির ওপরই নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। সেতুটি নির্মাণের সময় খালে দেওয়া হয়েছিল আড়াআড়ি মাটির বাঁধ। সেতু হয়ে গেলেও মাটির বাঁধটি অপসারণ করেননি ঠিকাদার। এতে বন্ধ হয়ে যায় বিলের পানিনিষ্কাশন। ফলে বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে এখন আর ধান চাষ হচ্ছে না এবং তা ৯ বছর ধরে।

কাঠুরিয়া বিলটি স্থানীয়ভাবে ‘বোরো ধানের ভান্ডার’ নামে পরিচিত। এমন বিলে যখন বছরের পর বছর ধান চাষ বন্ধ থাকে, এর থেকে দুঃখজনক ও হতাশাজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। কৃষকদের দাবির মুখে খালটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে খালের মাটির বাঁধটি খননের অংশে পড়ছে না। ওই অংশ খননের উদ্যোগ না নেওয়ায় খাল খননের সুফল মিলবে না এবং কৃষকের দুঃখও ঘুচবে না, এমন শঙ্কাই করতে হচ্ছে।

একটি সেতু তৈরি করতে গিয়ে ঠিকাদার যে বড় ধরনের ক্ষতি করে গেলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? এলজিইডি কি এর দায় এড়াতে পারে? এখন আবার কেন এমন প্রকল্প নিল, যেখানে সংকট নিরসন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে? এ বিলের চাষবাস করেন নিম্নবর্ণের হিন্দুরা। সেখানকার ১১টি গ্রামজুড়ে তাঁদের বসবাস। এখন বিলটিতে ৯ বছর ধরে তাঁদের চাষবাস বন্ধ রয়েছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিল কাঠুরিয়ার জলাবদ্ধতার কারণে তাঁরা চরম বৈষম্য ও অবহেলার শিকার।

খালের কোন অংশ কে খনন করবে, তা নিয়ে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আলাদা বক্তব্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের দায়িত্ব তারা একে অপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরও করণীয় আছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগও জরুরি। যাহোক, আমরা বিল কাঠুরিয়ায় আর জলাবদ্ধতা চাই না। দ্রুত মাটি কেটে বাঁধটি অপসারণ করে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে কৃষি ও কৃষকদের মুক্তি দেওয়া হোক।