সংকট দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

ঝরে পড়ার হার কমাতে কয়েক বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের মিড ডে মিল বা দুপুরের খাবার চালু করা হয়। যদিও গোটা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির সুবিধাভোগী হতে পারেনি।

তবে স্কুলে সুপেয় পানির সরবরাহ না থাকাটা গুরুতর একটি সংকট। ঝরে পড়া রোধে এই সংকট দূর করার দিকেও মনোযোগী হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের যৌথ গবেষণার একটি প্রতিবেদন বলছে, দেশে অন্তত ২০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুপেয় পানি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক।

গবেষণাপত্র অনুসারে প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটি কোটির মতো। তার মানে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। মূলত পাহাড়, উপকূলসহ বিভিন্ন দুর্গম এলাকার সব স্কুলে সুপেয় পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়নি। যেমন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৭৯টি। এর মধ্যে নলকূপ আছে ৪৭টিতে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় গভীর নলকূপ বসানো সেখানে সহজ নয়।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ কিংবা সুপেয় পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই।

এমনও বিদ্যালয় আছে, যেখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর তৃষ্ণা মেটাতে মাত্র দুই কলসি পানি পাওয়া যায়। তা-ও পুকুরের পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে পান করতে হয়। এ থেকে বোঝা যায়, শহর ও মফস্‌সল এলাকা বা অপেক্ষাকৃত সুবিধাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায় কতটা সংগ্রাম করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে দুর্গম এলাকার এসব শিক্ষার্থীকে।

দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ স্কুলে উন্নত এবং সহজে প্রাপ্য পানির বন্দোবস্ত আছে। এটি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। তবে শতভাগ স্কুলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বসে থাকার সুযোগ নেই।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলছেন, পানির সরবরাহ নিশ্চিত না হলে, বিশেষ করে কিশোরীদের বড় দুটি সমস্যায় পড়তে হয়। এর মধ্যে একটি হলো মাসিকের দিনগুলোতে স্কুলে উপস্থিতি কমে যায়। আবার এই অনুপস্থিতির জন্য উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর আবদুস শহীদের ভাষ্য, ‘করোনার কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। তবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুপেয় নিরাপদ পানি সরবরাহ আমাদের অঙ্গীকার। আর তা আমরা বাস্তবায়ন করছি।’ আমরা তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি দ্রুত তাঁরা তাঁদের এ অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটাবেন।