সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিন

দেড় শ বছর আগে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কলকাতার মশার উপদ্রব নিয়ে লিখেছিলেন, ‘রাতে মশা, দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতা আছি।’ সেই কলকাতা অনেকটা মশামুক্ত হলেও বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় মশা জেঁকে বসেছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় কিউলেক্স মশার প্রকোপ ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এর
মধ্যে উত্তর সিটিতে বেড়েছে বেশি। ঢাকার দুই সিটি, সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিচালিত ধারাবাহিক জরিপে দেখা যায়, গত জানুয়ারির তুলনায় চলতি মার্চ মাসে কিউলেক্স মশার পরিমাণ ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

কীটতত্ত্ববিদেরা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রায় ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে ১৬ প্রজাতির মশার প্রকোপ বেশি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে যে কয়েক প্রজাতির মশা থাকে, এর মধ্যে কিউলেক্স ৯৫ শতাংশের বেশি। কিউলেক্স মশার কামড়ে গোদ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির যাত্রাবাড়ী, উত্তর সিটির দক্ষিণখান, উত্তরার দুটি স্থান ও মিরপুর এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফাঁদ পেতে মশা পর্যবেক্ষণ করছেন গবেষকেরা। জরিপ হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে উত্তরায় গড় মশার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—৬০০। এরপরই আছে দক্ষিণখান।

উত্তরার এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘মশা মারতে কয়েল, অ্যারোসল, মশা তাড়ানোর বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করেও মশা কমানো যাচ্ছে না। সকাল, সন্ধ্যা, রাত—সব সময় প্রায় একই অবস্থা।’

উত্তরের তুলনায় ঢাকা দক্ষিণে মশার উপদ্রব কম হলেও যাত্রাবাড়ীতে গড় মশার সংখ্যা ৪০০-এর ওপর। এ ছাড়া হাজারীবাগ, শ্যামপুর ও মেরাদিয়ায় মশার আধিক্য আছে।

গবেষণা জরিপে নেতৃত্বদানকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘গত বছরের অক্টোবর থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে মশার ওপর জরিপ করছি; এবং প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় মশার বৃদ্ধি দেখছি। এখনই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’

গবেষক কিংবা ভুক্তভোগীরা যা-ই বলুন না কেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে খুব তৎপরতা দেখাচ্ছে বলে মনে হয় না। তারা একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে নিজে দায়মুক্ত থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে।

মশা বৃদ্ধি সম্পর্কে উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেছেন, উত্তরার কিছু খাল রাজউকের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাঁরা (সিটি করপোরেশন) কিছু করতে পারছেন না। এটি খোঁড়া যুক্তি। নগরের দুটি সেবাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সমন্বয় থাকবে না কেন? মেট্রোরেলের লাইনের পাশে নালায় পানি জমলে সেটাও দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের কারণে মশার বিস্তার ঘটছে, সেসব প্রতিষ্ঠান যত ক্ষমতাধরই হোক, জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

ঢাকা শহরে মশা, বিশেষ করে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটলে কী ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়, নগরবাসী গত বছর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। গত বছর ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সামনে বর্ষার মৌসুম। এ সময় ময়লা পানি জমার আশঙ্কা বেশি, যা মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। 

অতএব, একে অপরের ওপর দায় না চাপিয়ে মশা নিধনে অবিলম্বে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিন। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি এ বিষয়ে নাগরিকদেরও সজাগ থাকতে হবে। প্রত্যেকের অঙ্গীকার করতে হবে, ‘আমার বাড়ির আঙিনায় পানি জমতে দেব না।’