চকরিয়ায় পাথর নিক্ষেপ থামান

একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনার পরও ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি যারপরনাই উদ্বেগজনক। নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার কারণে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দিন দিন মাত্রা ছাড়াচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ট্রেনযাত্রা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পাথর নিক্ষেপের মতো উটকো ঘটনা ট্রেনযাত্রায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চকরিয়ায় পৌঁছালে সেটি লক্ষ্য করে কয়েকটি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একটি পাথর প্রবল বেগে এসে জানালায় ধাক্কার পর এক যাত্রীর মুঠোফোনে এসে আঘাত করে। এতে তাঁর মুঠোফোনটি ভেঙে যায়।

সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, ট্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, চকরিয়ায় এ ধরনের পাথর নিক্ষেপের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। কিন্তু রেলওয়ের চকরিয়া স্টেশনমাস্টারের ভাষ্য থেকে বোঝার উপায় নেই চকরিয়ার নিয়মিত পাথর নিক্ষেপের ঘটনা রেলওয়ে আদৌ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে কি না। তিনি বলেছেন, কে বা কারা পাথর নিক্ষেপ করেছে, বিষয়টি জানা যায়নি। তবে এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের কর্মকর্তারা যখন পাথর নিক্ষেপের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন, সেখানে অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ কী? তাহলে কি রেলওয়ে মর্মান্তিক আরেকটি ঘটনা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকবে? ঢাকা–কক্সবাজার রেলপথে চকরিয়াতেই যখন পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে, তখন এ অপরাধে যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করা খুব কি কঠিন?

এটা সত্যি যে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বেশির ভাগ ঘটনার সঙ্গে কিশোর অপরাধীরা জড়িত। অনেক সময় তারা নিতান্ত খেলার ছলেই ট্রেনে পাথর ছোড়ে। কিন্তু তার ফল হতে পারে ভয়াবহ। যাত্রীদের চোখ হারানো থেকে শুরু করে মৃত্যুর ঘটনাও আমরা ঘটতে দেখি। তবে সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠী, ট্রেন চলাচল করলে যাদের স্বার্থের হানি হয়, তারাও এ অপরাধে জড়িত থাকতে পারে।

ট্রেনযাত্রাকে নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব করতে হলে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সবার আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকা জরুরি। প্রয়োজনে এ কাজে তারা আইন প্রয়োগকারী অন্য সংস্থার সহযোগিতা নিতে পারে। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকায় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিও এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সহায়ক হতে পারে।