দাম বাড়ানোর আগে সুপেয় পানি দিন

যেদিন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ভর্তুকি দিয়ে ঢাকায় ধনীদের পানি সরবরাহ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করলেন, তার এক দিন পরই ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর তৎপরতা শুরু করল। 

সংস্থাটি পাঁচ স্তরে পানির দাম রাখতে চায় বলে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার করা কারিগরি সমীক্ষায় বর্তমান দামের তুলনায় শ্রেণিভেদে ২৪ থেকে ১৪৭ শতাংশ পর্যন্ত পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত—সব শ্রেণির গ্রাহকেরই খরচ বাড়বে।

মন্ত্রী জানিয়েছেন, ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় ২৬ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রি করা হচ্ছে ১৫ টাকায়। এক হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৬ থেকে ৩০ টাকা হয় বলে তিনি যে দাবি করেছেন, তা কতটা তথ্যভিত্তিক? ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের দেওয়া হিসাব আর প্রকৃত ব্যয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পরিশোধন করা পানির উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা। অথচ বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৭০ শতাংশই গভীর নলকূপ বা ভূগর্ভস্থ উৎসের। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ অনেক কম।

বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ঢাকা ওয়াসার প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে এই হারে পানির বিল দিতে হয়। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতি হাজার লিটার পানির বিল দিতে হয় ৪২ টাকা।

ঢাকা ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ—এই পাঁচ শ্রেণি পাঁচ ধরনের দাম পরিশোধ করবেন। যাঁরা ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের বাসায় থাকেন, তাঁরা উচ্চবিত্ত; ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বাসায় যিনি থাকছেন, তিনি উচ্চমধ্যবিত্ত; ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বাসায় বসবাসকারীদের মধ্যবিত্ত এবং ১ হাজার বর্গফুটের নিচে বসবাসকারীদের নিম্নমধ্যবিত্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। 

ওয়াসার এই স্তরবিন্যাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আয় অনুযায়ী তারা পরিষেবার মাশুল নিতে চায়, খুবই ভালো কথা। কিন্তু দাম বাড়ানোর আগে ঢাকা ওয়াসাকে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাটি ঢাকার বাসিন্দাদের যে পানি সরবরাহ করছে, তা না ফুটিয়ে খাওয়া যায় না। এ ছাড়া অনেক এলাকায় পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকারও গুরুতর অভিযোগ আছে। 

ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানের পরিষেবার মান যত খারাপ হয়েছে, তাঁর বেতন-ভাতা তত বেড়েছে। সরকার এই ব্যক্তিকে ঢাকা ওয়াসার জন্য অপরিহার্য ভাবতে পারে, কিন্তু ঢাকার বাসিন্দারা সুপেয় পানি পাচ্ছেন কি
না, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। বিত্তবানেরা বোতলজাত পানি খাচ্ছেন। কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষকে ওয়াসার পানি ফুটিয়েই খেতে হচ্ছে। 

নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চালসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়েনি। এ অবস্থায় পানির দাম বাড়ানো হলে সেটি হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বাসাবাড়িতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই গ্যাসের দাম বাড়ছে না।  

আমরা আশা করব, ঢাকা ওয়াসার অভিভাবক মন্ত্রীও এই মুহূর্তে পানির দাম না বাড়িয়ে ওয়াসার অপচয় ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ঢাকার বাসিন্দারা যাতে সুপেয় পানি পান, সেই ব্যবস্থা নেবেন।