সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তে পারে

সম্পাদকীয়

করোনা চলে গেছে এটা যাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁদের কথা ভুল প্রমাণ করে চীন, জাপানসহ কয়েকটি দেশে নতুন করে ব্যাপক হারে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হালনাগাদ রোগতাত্ত্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে (১২-১৮ ডিসেম্বর) চীনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হন।

এই সময় মারা যান ৩৩৭ জন। এই সময় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ভারতে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৩০ জন।

এটা আমাদের দেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ। চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বাড়লেও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের একটি ধরন অমিক্রন। অমিক্রনের একটি উপধরন বিএ-৫। বিএ-৫-এর একটি উপধরন বিএফ (বিএ.৫.২.১.৭)। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে এই নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। এই উপধরনটি অমিক্রনের অন্য যেকোনো উপধরনের চেয়ে চার গুণ বেশি সংক্রামক। ফলে কম সময়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

চীনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সে রকম কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। প্রতিবেশী ভারতে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশ নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না। যদিও এখনো পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের হার কম। শনিবার সাতজন নতুন আক্রান্তের তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যার এই স্বল্পতা দেখে আমাদের স্বস্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। করোনা এমন একটি রোগ, যা দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার সংবাদ সম্মেলন করে কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে। এর মধ্যে আছে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, দূরত্ব বজায় রাখা এবং যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের রোগ শনাক্ত করা।

টিকা দেওয়া নিয়ে সরকার যতই সাফল্য দাবি করুক না কেন, এখনো পিছিয়ে আছি। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার নিয়মিত কেন্দ্রগুলোতে চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছিলেন ৪৭ হাজার ১০৬ জন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ পেয়েছেন যথাক্রমে ৭৪ ও ৩৮ শতাংশ।

এর অর্থ এখনো অনেক মানুষ টিকার বাইরে থেকে গেছেন। টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে অনাগ্রহ থাকলেও পরে কিন্তু আগ্রহ বেড়েছে। ব্যবস্থাপনাও আগের চেয়ে উন্নত। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, এক বছরের মতো টিকার ডোজের কার্যকারিতা থাকে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের সবারই চতুর্থ ডোজ নেওয়ার সময় এসেছে।

করোনার নতুন সংক্রমণ বাড়ুক বা না বাড়ুক, আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। যদি কোনো কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় বিপদ বাড়তে পারে।