প্রজননক্ষেত্রটি রক্ষায় উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

একটি সময় আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি ও জনসমাজে দেখা সুপরিচিত প্রাণী ছিল কচ্ছপ। নদী, খাল, বিল, এমনকি পুকুরেও দেখা মিলত প্রাণীটির। সেই কচ্ছপের এখন দেখা মেলা ভার। কচ্ছপের বড় আবাসস্থল সমুদ্রও এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কচ্ছপের বড় প্রজননক্ষেত্র। নানা কারণে সেই প্রজননক্ষেত্রও ধ্বংসের মুখে। বলা যায়, চারদিক থেকেই অস্তিত্বহীনতায় পড়তে হচ্ছে কচ্ছপকে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

এখন কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম চলছে। কিন্তু আগের তুলনায় মা কচ্ছপদের আসার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যারা আসছে, তারাও কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সৈকতে ভেসে এসেছে মা কচ্ছপের ছয়টি মৃতদেহ। ৩৫ থেকে ৪০ কেজি ওজনের এসব কচ্ছপের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গবেষকেরা বলছেন, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার, বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত পর্যটকের উপস্থিতি ও দূষণের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্রবাল দ্বীপটিতে।

বাংলাদেশে পাঁচ প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে সেন্ট মার্টিন এলাকায় জলপাইরঙা বা অলিভ রিডলে কচ্ছপ বেশি দেখা যায়। এই জাতের কচ্ছপকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)। লাল তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রতীয়মান হয় যে এলাকাটিতে এ কচ্ছপ হয় বিপন্ন বা মহাবিপন্ন অথবা সংকটাপন্ন বা বিপদগ্রস্ত আছে। এর মধ্য দিয়ে একটি প্রাণী ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়ার দিকেই ধাবিত হয়। সেন্ট মার্টিনের সামুদ্রিক কচ্ছপের পরিণতিও কি তাহলে তেমনটি হতে যাচ্ছে?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মো. ফরিদ আহসান কচ্ছপের ঝুঁকির কারণ হিসেবে বলছেন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কক্সবাজার সৈকতে কাছিমের আবাসস্থল ধ্বংস করা, নিষিদ্ধ কারেন্ট ও টানা জালের ব্যবহার, সৈকত এলাকায় যথেচ্ছ আলোকায়ন, জালে আটকে পড়া মা কাছিম মেরে ফেলা, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়া, ডিম ছাড়ার মৌসুমে সৈকতে ডাইভিং, খেলাধুলা, ডিম পাচার প্রভৃতি।

এখন সেন্ট মার্টিনে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ কেন বন্ধ হয় না? মৌসুমের সময় দ্বীপটিতে অতিরিক্ত পর্যটক নিয়ে যাওয়ার আয়োজন আর কতকাল চলবে? শত শত নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বিহিঙ্গ জাল দিয়ে মাছ ধরাও কি চলতে থাকবে আজীবন?

আমরা জানতে চাই, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষায় সুনির্দিষ্ট বিধিমালা থাকলেও তা কেন অনুসরণ করা হয় না। সেন্ট মার্টিনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার কথা উঠলেই পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবলসংকটের কথা শোনা যায়। সেই সংকট কেন নিরসন হয় না? শুধু বেসরকারি উদ্যোগে সেন্ট মার্টিনের কচ্ছপ প্রজননক্ষেত্র রক্ষা করা যাবে না। সরকারকেই আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। গবেষকদের সঙ্গে নিয়ে উদ্যোগ নিন, বিলুপ্ত হওয়ার আগে সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্রটি রক্ষা করুন।