সংকট সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

আমাদের শহরগুলোর পরিধি বাড়ছে, জনঘনত্ব বাড়ছে; কিন্তু সে তুলনায় কমছে নাগরিক সেবা। নগরগুলো দিন দিন বসবাসযোগ্যতা হারানোর পেছনেও বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে তা। এমন গ্যাস সরবরাহ লাইন গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে অগ্নিদুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণ ঘটে হতাহত হচ্ছে মানুষ।

এমন পানি সরবরাহব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, এতে নগরবাসী চরমভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। মানুষ ওয়াসার পানি সরবরাহ নিয়ে চরমভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে। নিরাপদ পানি সংগ্রহে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে তাদের। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ওয়াসার পরিষেবায় এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা গেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম শহরের অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। এমনিতে বিভিন্ন এলাকায় পানির সরবরাহ কমে গেছে। যেটুকু আসছে, তা-ও লবণের কারণে মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। এ পানি পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম নামের একটি সংগঠনের ডাকে মানববন্ধনও করেছেন তাঁরা।

এক সপ্তাহ ধরে ওয়াসার লবণাক্ত পানি নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন নগরবাসী। পানি পরিশোধন করলেও লবণ যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় নালার দুর্গন্ধযুক্ত, ময়লা ও কালো পানি পাচ্ছেন নগরবাসী।

কেউ দূরদূরান্তের পুকুর ও গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। কেউ পানি কিনে রান্না ও খাওয়ার কাজ সারছেন। গোসলসহ অন্যান্য কাজ করতে পারছেন না। ওয়াসার বেশির ভাগ লাইন পুরোনো হওয়ার কারণে এমনিতেই সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের। লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণে পানি নষ্ট হয়। এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

ওয়াসার দাবি, কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমা, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়া, কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে সমুদ্রের পানি প্রবেশের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সংকটের সমাধান হবে না।

তবে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের বক্তব্য, হ্রদে পানি কমে যাওয়া কিংবা নদীতে শেওলা আসার ঘটনা পুরোনো। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না।

পানির দাম বাড়ে, উন্নয়ন প্রকল্পেও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়, কিন্তু নগরবাসীকে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করতে বলছে ওয়াসা। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আমরা আশা করব, হাত গুটিয়ে বসে না থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নগরবাসীকে স্বস্তি দেবে ওয়াসা।