কৃষকের হকের সার কেন বেহাত হবে

সম্পাদকীয়

তামাক চাষ কৃষিজমি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হওয়ার কারণে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষ করা হলে জমির উর্বরতা কমে। জনস্বাস্থ্যের ওপরও তামাকের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এসব ক্ষতির পরও বেশি লাভের আশায় কৃষকেরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ সারসংকট। জ্বালানিসংকটের কারণে দেশের সার কারখানাগুলোয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ডলার–সংকটের কারণে চাহিদামতো সারও আমদানি করা সম্ভব হয় নয়। কৃষি খাতে সরকার কৃষককে সরাসরি ভর্তুকি না দিয়ে সার–বীজে ভর্তুকি দিয়ে আসছে।

বিগত সময়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ডিলাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে কৃষকের কাছে সার বিক্রি করেন। ফলে কৃষকের মহার্ঘ সেই ভর্তুকির সার যদি ধান, সবজি কিংবা অন্য কোনো অপরিহার্য ফসলের উৎপাদনে ব্যবহৃত না হয়ে তামাক চাষে ব্যবহৃত হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, কৃষিপণ্য উৎপাদনের অন্যতম জেলা মেহেরপুরের কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে তীব্র সারসংকটে পড়েছেন। তার কারণ হচ্ছে, সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার সরবরাহ করলেও তার বেশির ভাগই তামাক চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এক বিঘা জমিতে সবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয়, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাগে তামাক উৎপাদনের জন্য। মাটি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষে কৃষি বিভাগ ভর্তুকির জন্য কোনো সার বরাদ্দ রাখে না। আগে তামাক কোম্পানিগুলো নিজেরা আমদানি করে সেই সার কৃষকদের সরবরাহ করত। কিন্তু এখন তারা সার কেনার জন্য তামাকচাষিদের নগদ অর্থ দেয়। সেই টাকা দিয়েই তামাকচাষিরা কৃষকদের ভর্তুকির সার বাজার থেকে কিনে নিচ্ছেন। ফলে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে ব্যাপক সংকটে পড়েছেন এ জেলার কৃষকেরা। ভরা শীত মৌসুমেও কৃষকেরা তাঁদের জমিতে সার দিতে না পারায় কঙ্ক্ষিত ফসল ফলাতে পারছেন না। এতে তাঁরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন।

মেহেরপুরে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষকের ভর্তুকির সার কেন তামাকচাষিদের কাছে যায়? কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে অবশ্যই সেখানে তামাক চাষের লাগাম টেনে ধরতে হবে। ভর্তুকির সারের প্রকৃত সুবিধাভোগী কৃষকদের হকের সার যেন বেহাত না হয়, সে জন্য একটা ব্যবস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে উদ্ভাবন করতে হবে।