শিকলবন্দী জীবন: হামিদুলকে মুক্ত করুন, চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম মাধনগরের বামনপাড়া গ্রামের হামিদুলকে কি শিকলবন্দী জীবনই কাটাতে হবে? প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ১০ বছর বয়সে খেলতে খেলতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় এক প্রার্থীর প্রচারণায় ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন, গুরুতর আঘাত পান মাথায়। কাটাছেঁড়া ভালো হলেও বছর চারেক পর থেকে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হতে শুরু করেন। দৌড়ে রাস্তায় চলে যেতেন, একে-ওকে মারতেন, ভাঙচুর করতেন।

দরিদ্র মা–বাবা তাঁদের সাধ্যমতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে আর মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই হামিদুলের এখন জায়গা হয়েছে তাঁর নানাবাড়ির খোলা আঙিনায়, একটা আমগাছের সঙ্গে। শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে দিনভর তাঁকে বেঁধে রাখা হয়।

হামিদুলের মা দুঃখ করে বলেছেন, যাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে ছেলের এই দশা, তিনি খোঁজ নেন না। সরকারের কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা পান না। এমনকি প্রতিবন্ধী ভাতাও নয়। ওটা পেলেও সন্তানকে অন্তত কিছু খাওয়াতে পারতেন।

আমাদের দেশে বহু বছর ধরে চোখের সামনে কত যে অন্যায়-অপরাধ চলে আসছে! যেহেতু এসবের শিকার হামিদুলের মতো প্রান্তিক পরিবারের মানুষেরা, তাই কারও কিছুই যায়–আসেনি। ধরুন, বাংলাদেশ শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এই আইন ভঙ্গ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। হামিদুলকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখে তাঁকে নিরাপদে বাড়ি পাঠানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই দায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী, নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু তাদের কাউকে কখনো শিশুদের দিয়ে রাজনৈতিক প্রচারের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে শোনা যায় না। 

গ্রামীণ রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় হামিদুল আহত হন। দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছে, আহত হচ্ছে—বিচার হচ্ছে কয়টির? স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে সরকার। মানসিক রোগে আক্রান্ত হামিদুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক কি উপজেলা, জেলা বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে অবহিত করেছে? হাসপাতালগুলোয় দরিদ্র রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার সুযোগ আছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এর দেখভাল করে। তারা কি তাদের দায়িত্ব নিয়েছে? হামিদুল সবারই চোখ এড়িয়ে গেছেন। মানসিক রোগের চিকিৎসার দশা আর নাই–বা বললাম। ১৭ কোটি মানুষের দেশে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের সংখ্যা ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিল ২৭০ জনের মতো।

তারপরও বলব, হামিদুলকে শিকলমুক্ত করার উদ্যোগ নিন। তাঁকে বাঁচতে দিন।