অলিম্পিক বাছাইয়ে যেতে না পারার দায় কার

সম্পাদকীয়

৬৬ লাখ টাকা জোগাড় করা যায়নি বলে প্যারিস অলিম্পিকের নারী ফুটবলের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাই খেলতে বাংলাদেশ দলকে মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। অথচ মাত্র ছয় মাস আগে কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে দলটি। বিজয়ী মেয়েদের ছাদখোলা বাসে দেওয়া হয় সংবর্ধনা, যা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বিরল ঘটনা।

যে মেয়েরা বাংলাদেশের জন্য এমন গৌরব বয়ে আনলেন, যাঁদের নিয়ে স্বপ্ন তৈরি হলো, অর্থের সংকুলান না হওয়ায় তাঁদের অলিম্পিক বাছাইয়ের মতো বড় আসরে খেলতে না দিতে যাওয়ার ঘটনা যারপরনাই বিস্ময়কর ও হতাশাজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ৫-১১ এপ্রিল মিয়ানমারে প্যারিস অলিম্পিক-২০২৪-এর এশিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হতো ইরান, মালদ্বীপ ও স্বাগতিক মিয়ানমার। শক্ত প্রতিপক্ষ হওয়ায় দলগুলোর সঙ্গে খেললে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হতো। কিন্তু সেই সুযোগ থেকে কেন নারী ফুটবল দলকে বঞ্চিত করা হলো?

বাফুফে বলছে, মিয়ানমারে দল পাঠাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না থাকায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চায় তারা। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছেও অর্থসহায়তা চেয়েছিল তারা। কিন্তু কোথাও থেকে ইতিবাচক সাড়া না মেলায় শেষ পর্যন্ত সফর বাতিল করা হয়েছে। আবার নিবন্ধন করে সরে আসায় জরিমানাও গুনতে হচ্ছে বাফুফেকে।

ুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বিওএর ওপর দায় চাপালেও প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করে দল বিদেশে পাঠানোর দায়িত্ব বাফুফের। সেই দায়িত্ব পালনে তারা স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বলছে, বাফুফে শেষ মুহূর্তে চিঠি দেওয়ায় তাদের করণীয় ছিল না কিছু। অন্যদিকে বিওএ বলছে, বাফুফে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চায়নি।

বাফুফে এ ক্ষেত্রে যে চরম অপেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছে সেটা এখানে স্পষ্ট। বাফুফে সভাপতির ভাষ্য হলো, ‘এত দিন সবার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি। এখন ভিক্ষার দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে।’ এখানে যে প্রশ্নটি সামনে চলে আসে তা হলো, টুর্নামেন্টে দল পাঠাতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে কেন আর্থিক সহায়তা চাইতে হবে বাফুফেকে? মেয়েদের ফুটবলে তো স্পনসর আছে। কিন্তু স্পনসরের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে বাফুফে, সেখানেও অপেশাদারত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। কেননা, চুক্তি অনুযায়ী বাফুফে ভবনে মেয়েদের থাকা-খাওয়া এবং লিগের স্পনসর করলেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কোনো টাকা তারা দেবে না।

সাফ জিতে আসার পর পুরস্কার ও মেয়েদের ফুটবলের উন্নতির জন্য বাফুফেকে এক কোটি বিশ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিল প্রথম আলো। প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। সেই তহবিল থেকে ফুটবল দলকে কি মিয়ানমারে পাঠানো যেত না। এ প্রশ্নে বাফুফের উত্তর হলো, মেয়েদের ফান্ডের খাওয়ার টাকায় যদি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি, তাহলে মেয়েরা না খেয়ে থাকবেন।

সাফ জয় করে আসায় নারী ফুটবলারদের ঘিরে যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, বাফুফের আচরণে তার পুরোপুরি উল্টো যাত্রাটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে জাতীয় দলসহ আমাদের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের ক্যাম্প পরিচালনা করা ব্যয়বহুল।

কিন্তু সাফসহ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য করে তোলার জন্যই ক্যাম্পে রেখে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানেই যদি অংশগ্রহণ না করতে পারেন, তাহলে সব আয়োজনই অর্থহীন হয়ে পড়ে।

নারী ফুটবলের উন্নয়নে বাফুফের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। ৬৬ লাখ টাকা জোগাড় না হওয়ায় নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমারে না পাঠাতে পারার ঘটনা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর দায় বাফুফে এড়াবে কীভাবে?