দেশের জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে সরকারি পুকুরগুলোই এখন ভরসা, ব্যক্তিগতগুলোর ভরাট তো কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ব্যক্তিগত পুকুর ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। সেসব পুকুর রক্ষা তো করতে পারছেই না স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি সরকারি পুকুরগুলোও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
আরও দুঃখজনক হচ্ছে, অনেক সময় সরকারি অবকাঠামো উন্নয়নকাজে সরকারি পুকুরগুলোই শিকার হচ্ছে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনের নির্মাণের জন্য ভরাট করা হচ্ছে ভেতরে থাকা একটি পুরোনো পুকুর। এ ঘটনায় স্থানীয় পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলন গড়ে তুলেছে।
মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের ভবনটি পুরোনো হওয়ায় নতুন একটি ভবন করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন ভবনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে পাশেই ৫০ বছরের পুরোনো একটি পুকুরকে। প্রায় এক একরের পুকুরটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে এবং সেই কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার বাসিন্দারা শুরু থেকেই সরব। এরপরও ভরাটের কাজ বন্ধ করেনি উপজেলা পরিষদ।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, উপজেলা পরিষদের উন্নয়নের স্বার্থে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েই পুকুরটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়েছে। বিকল্প স্থান না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। পুকুর ভরাট করা আইনে নিষিদ্ধ হলেও জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার সেটি ভরাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেই ক্ষমতার বলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বিকল্প জায়গায় নতুন ভবন করার সুযোগ আছে। এমনকি জায়গা অধিগ্রহণ করেও সেটি সম্ভব। আরও বড় বিষয় হচ্ছে, পুরোনো ভবনের স্থলেই হতে পারে নতুন ভবন। সে ক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হতে উপজেলা পরিষদের সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। প্রশাসন ও সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নানা উন্নয়নকাজে বছরের পর বছর ধরে জনগণের ভোগান্তি বা দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। সে ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা মেনে নিতে উপজেলা পরিষদের সমস্যা কোথায়। এতে বরং অর্ধশতাব্দীর পুরোনো পুকুরটি বেঁচে যায়।
গতকাল বুধবার পুকুরটি রক্ষায় ময়মনসিংহের সাতটি নাগরিক সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠন একযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে। পুকুর বাঁচাতে তারা প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা মনে করি, উপজেলা পরিষদ নিজেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এতে পুকুরটিও রক্ষা পাবে, তাদের ভবন নির্মাণও আইনি জটিলতার মুখে পড়ল না। উপজেলা পরিষদের ভেতরের পুকুরই যদি রক্ষা করা না যায়, তাহলে উপজেলার অন্য পুকুরগুলোও হুমকিতে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আশা করব, উপজেলা পরিষদের বোধোদয় হবে।