এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উত্তরণ হোক

সম্পাদকীয়

দেশে নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি কমানো গেলেও বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই তীব্র অপুষ্টির শিকার হতে হচ্ছে অনেক শিশুকে। দেশে এমন বয়সের দেড় কোটির বেশি শিশুর মধ্যে সাড়ে তিন লাখের বেশি মারাত্মক তীব্র অপুষ্টির শিকার। এসব শিশুর মৃত্যুহারও বেশি।

শিশুর তীব্র অপুষ্টি রোধে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে একটি ব্যবস্থাপনা। দুঃখজনক হচ্ছে, তদারকির অভাবে সেই ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। ইউনিসেফের সহায়তায় সরকারের জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির এক জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে। অপুষ্টি চিকিৎসায় এমন অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

গত সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে চরম অপুষ্টির (সিভিয়ার অ্যাকুইট ম্যালনিউট্রিশন বা স্যাম) শিকার শিশুদের চিকিৎসাব্যবস্থার মূল্যায়ন নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সারা দেশে গড়ে তোলা ৪৮৭টি স্যাম সেন্টারের মধ্যে ৪৩৬টি থেকে তথ্য নিয়ে এ জরিপ করা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে, স্যাম সেন্টারগুলোর চিত্র খুবই ভয়াবহ। কয়েক লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগলেও গত বছর এসব স্যাম সেন্টার থেকে চিকিৎসা পেয়েছে মাত্র ১২ হাজার। এতেই প্রকাশ পায়, দেশের অপুষ্টি চিকিৎসা কতটা বেহাল।

জরিপের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, শিশুদের জন্য সরবরাহ করা বিশেষ ধরনের খাদ্য ও পথ্য স্যাম সেন্টারের গুদামে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সেগুলো শিশুদের দেওয়া হয় না। এমনকি অনেক চিকিৎসক জানেন না যে সেখানে এসব জিনিসের মজুত আছে। শুধু তা-ই নয়, সরকার প্রতিটি হাসপাতালে ওজন ও উচ্চতা পরিমাপের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়েছে কিন্তু ৪৪ শতাংশ হাসপাতালে সেসব সামগ্রী নেই বা অকেজো হয়েছে।

এর জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসার জন্য ৪ শতাধিক চিকিৎসক ও ৯ শতাধিক নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোও হয়েছে। কিন্তু ৬০ শতাংশের বেশি প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স হাসপাতালে নেই। তাহলে সরকারের বরাদ্দ খরচ করে এত জনবলকে প্রশিক্ষিত করে কী লাভটা হলো?

বাংলাদেশ অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রেও অনেক সাফল্য দেখিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু স্যাম সেন্টারের এসব অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে না পারলে সেই সাফল্য অচিরেই ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে।

সেটি যাতে না হয়, প্রতিটি স্যাম সেন্টারে প্রয়োজনীয় খাদ্য, পথ্য ও সামগ্রী নিশ্চিত করতে হবে এবং সেগুলো যাতে গুদামে পড়ে না থাকে, সে ব্যাপারে তদারকি বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সদের অবশ্যই স্যাম সেন্টারে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় কর্মসূচিকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।