রাজনীতি দখলবাজিকে চালায় নাকি দখলবাজি রাজনীতিকে চালায়—এই প্রশ্ন অনেক আগে থেকেই এই দেশে ‘ডিম আগে নাকি মুরগি আগে’র মতো ধাঁধা হয়ে আছে। এখানে ক্ষমতায় থাকলে দখলদারির পথ পরিষ্কার থাকে; আবার দখলদারির হাত ধরেই ক্ষমতায় যেতে হয়। এই বাস্তবতাকে এত দিন সবাই নিয়তি জ্ঞানের মতো মেনে নিয়েছিল।
তবে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকালে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পালাক্রমিক সেই দখলবাজির ‘নিয়তি’ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার আশাবাদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হটিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দখলবাজি ও চাঁদাবাজি সেই আশাবাদকে কিছুটা ফিকে করে দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
দেশব্যাপী বিএনপির নানা ধরনের দখলবাজির প্রকৃষ্ট নজির মিলেছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়। তাঁরা সেখানকার বৈধ ইজারাদারদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে শিমুলিয়া ফেরিঘাট, মাছঘাট ও ট্রলারঘাট দখলে নিয়েছেন এবং সেখান থেকে টাকা তুলছেন। সেখানে তাঁরা প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার চাঁদাবাজি করছেন।
প্রথম আলোর খবর বলছে, চলতি অর্থবছরে লৌহজং উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মোল্লা প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ঘাটের ইজারা নেন। সেই সঙ্গে আলাদা করে ৮ লাখ টাকায় এখানকার দুটি ট্রলার ঘাট এবং ১০ লাখ টাকায় একটি মাছ ঘাটেরও ইজারা নেন তিনি। সরকারি বিধি মেনে ঘাটের কার্যক্রম চলছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদারের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের একটি দল ঘাটের সব ব্যবসা দখলে নেন।
যেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে বিতর্কের বাইরে থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে সুন্দর একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মাঠপর্যায়ে দলটির নেতা-কর্মীদের এই ধরনের তৎপরতা দেশকে আবার অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার সমার্থক।
স্বীকার্য যে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার সুবাদে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে বঞ্চনার অনুভূতি পুঞ্জীভূত হয়েছে, নবীন সরকারের প্রশাসন গোছাতে ব্যস্ত থাকার সুবাদে সেই বঞ্চনাবোধের বিকৃত প্রকাশ হিসেবে দখলদারির ঘটনাগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে।
যেহেতু সরকার একেবারে নতুন এবং তারা প্রশাসনযন্ত্র গোছানোয় ব্যস্ত রয়েছে, সেহেতু এসব চাঁদাবাজির রাশ টেনে ধরার দায় বিএনপির ওপর বেশি বর্তায়। জাতি আশা করে একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপি শিমুলিয়ার ঘটনাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ঘটমান অনুরূপ দখলবাজি প্রতিরোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে।