এক বছরের অপেক্ষা কবে শেষ হবে

এক বছর আগে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী শহর। সেই বন্যায় প্রাণহানি এবং হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শহরের প্রধান সড়কগুলোও তাদের জৌলুশ হারিয়েছিল। একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা এক শহরে পরিণত হয়েছে। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের মতো ব্যস্ততম রাস্তা থেকে শুরু করে শহরের ৩০টির বেশি অভ্যন্তরীণ সড়কের করুণ দশায় কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে। 

এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর কোনো দৃশ্যমান সংস্কার হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলো ডুবে যায়। কারণ, শহরের নিষ্কাশনব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। এই ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো শুধু যানবাহনের গতিই কমিয়ে দেয়নি, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যানবাহনের চালকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, আয় কমছে আর যাত্রীরাও পড়ছেন চরম ঝুঁকির মুখে। শহরের ড্রেনেজব্যবস্থার করুণ দশাও শহরের সাধারণ মানুষের হতাশা তৈরি করেছে। 

পৌর কর্তৃপক্ষ আশার বাণী শোনাচ্ছে যে দ্রুতই সংস্কারকাজ শুরু হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানা গেছে, যার মাধ্যমে ৫০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। তবে প্রশ্ন হলো, এই উদ্যোগ নিতে কেন এক বছরের বেশি সময় লাগল? জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে অন্তত প্রাথমিক মেরামত শুরু করা যেত না কি?

ফেনীর সড়কগুলোর এই বেহাল কেবল আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে নয়, বরং প্রশাসনিক সদিচ্ছা এবং সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেও হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যদি অরক্ষিত থাকে, তবে এর দায়ভার কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এক বছর আগে যে বন্যা শহরের প্রায় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল, তার ক্ষত এখনো শুকায়নি। অথচ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি কাজগুলোই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হচ্ছে।

নাগরিকদের করের টাকা যখন সড়ক সংস্কারে কাজে লাগে না, তখন তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। আমরা আশা করি, পৌর কর্তৃপক্ষ শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ফেনীকে তার হারানো সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে।