সমস্যার সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

দেশের শিল্প খাতকে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে একটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার কথা কমই আলোচনায় আসে। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে পাকিস্তান আমলেই জেলাভিত্তিক ১৮টি শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়।

বাংলাদেশ আমলে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬টিতে। এতগুলো শিল্পনগরীতে অসংখ্য কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শিল্পনগরীগুলো ঘিরে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে।

বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচন ঘটেছে। এককথায় ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নে বিসিক একটি উদাহরণ তৈরি করেছে বলা যায়। আবার এর উল্টো পিঠে হতাশাও কম নয়।

কোনো কোনো শিল্পনগরীর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ আমরা শুনতে পাই। প্রযুক্তি ও আধুনিক সুযোগ–সুবিধা নিয়ে শিল্পদুনিয়া এগিয়ে গেছে কত আগে আর বিসিক শিল্পনগরীগুলো পড়ে আছে পেছনে। যাকে বলা হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা। বাগেরহাটের বিসিক শিল্পনগরীর দিকে তাকালে এমনটিই মনে হবে যে কারও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাগেরহাট শহরের দড়াটানা নদীতীরে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের পাশে নব্বইয়ের দশকে ২১ একর জমির ওপর এ শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। এখানে ১২৩টি প্লটে ৩৭টি ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। নারকেল তেলের মিলের জন্য এ শিল্পনগরী বেশ সুপরিচিত ছিল।

যদিও পরে নারকেল তেলের মিল ছাড়াও অটো রাইস মিল, ডাল মিল, ইজিবাইক সেটিংস, পুরোনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কোকোনাট ফাইবার মিলস গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে পড়ে অনেক কারখানা এখন বন্ধের উপক্রম।

পণ্য উৎপাদন ও পরিবহনে নানা ধরনের সমস্যা ও সংকটে রীতিমতো ধুঁকছে এ শিল্পনগরী। সড়কগুলো জরাজীর্ণ, বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বর্ষা মৌসুমে নদীর জোয়ারের পানি উঠেও প্লাবিত হয় রাস্তাঘাট। বিসিকের অভ্যন্তরে পাঁচটি সড়কের চারটি এখন চলাচলের অনুপযোগী। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ সেখানকার রাস্তাগুলো সংস্কার করছে না।

শিল্পমালিকেরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার শুরুতে যেসব সুযোগ–সুবিধা ছিল, তার কিছুই নেই এখন। চালকেরা ট্রাক নিয়ে আসতে চান না। মালিকদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সেখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা। শিল্পনগরীটি আধুনিকায়ন না করলে সেখান থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে তাঁরা কিছু কাজ শুরু করেছেন। সাবমারসিবল পাম্প বসানোর জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের নকশায় সমস্যার কারণে উন্নয়নকাজে দেরি হচ্ছে। সেটিও সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমরা তাঁদের কথায় আস্থা রাখতে চাই। দ্রুত শিল্পনগরীটিতে অবকাঠামো উন্নয়ন করে শিল্প কার্যক্রমের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।