বন্ধ হোক অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি

পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে ফি বছর ভজকট লেগেই থাকে। এর জন্য একশ্রেণির অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী যেমন দায়ী, তেমনি দায় এড়াতে পারে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও। তাদের সমন্বয়হীনতার কারণেও অনেক সময় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। 

মূল সমস্যা হলো আরও অনেক ভোগ্যপণ্যের মতো বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজের চাহিদা আছে, উৎপন্ন হয় তার চেয়ে কম। এ কারণে আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয়। যে বছর দেশে কম উৎপন্ন হয়, সে বছর আমদানি বেশি করতে হয়। যে বছর উৎপাদন ভালো হয়, সে বছর আমদানি কম করলেও চলে। 

বাংলাদেশ সাধারণত ভারত থেকেই বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। সম্প্রতি ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া পড়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল রাখা হবে বলে ভারত সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। 

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় প্রতি কেজিতে গড়ে শুল্ক আদায় হবে সাত টাকা। এ হিসাবে দেশেও প্রতি কেজিতে সাত টাকা বাড়ার কথা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ১৫ টাকা। এই প্রেক্ষাপটে সরকার আরও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। দেশগুলো হলো চীন, মিসর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

চলতি বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। দাম বেড়ে যাওয়ায় গত জুনে আবার আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করলেও কৃষি মন্ত্রণালয় তা আমলে নেয়নি।

এখন প্রশ্ন হলো, উল্লিখিত ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরও বাজার স্থিতিশীল হবে কি না। পেঁয়াজের দাম নিয়ে চোর–পুলিশ খেলা আর কত দিন? প্রতিবারই দেখা যায়, পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক যে পরিমাণ বাড়ে বা ধার্য হয়, বাজারে দাম বাড়ে তার চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে, যেসব পণ্য আগের এলসিতে বন্দরে এসে পৌঁছেছে, তার দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয় নানা অজুহাতে। কিন্তু যেসব পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যায়, সেসব পণ্যের দাম অভ্যন্তরীণ বাজারে খুব একটা কমানো হয় না।

ভারতে পেঁয়াজের ওপর শুল্ক বাড়ানোর খবর পেয়ে একজন ব্যবসায়ী তাঁর প্রতিষ্ঠানে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখতে এবং অন্যান্য দোকান থেকে দ্রুত কিনে ফেলার নির্দেশ দেন বলে পত্রিকার খবরে বলা হয়। এ রকম সুযোগসন্ধানী ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মনে হয় না। 

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট কখনোই ধরা পড়ে না। একজন প্রতিমন্ত্রী অবশ্য সরকারের ভেতরেই সিন্ডিকেট আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু তিনি কারও নাম বলেননি। এ রকম হাওয়ার বিরুদ্ধে তরবারি ঘোরালে কোনো কাজ হবে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি ক্রেতাসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, আমদানির সিদ্ধান্তও নিতে হবে আগেভাগে। বাজারে দাম বাড়ার পর পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো হয়।