উন্নয়ন প্রকল্পে লাভটা হলো কী

সম্পাদকীয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঢুকলেই দেখা যায় উন্নয়ন প্রকল্পের ছড়াছড়ি। নির্মিত ও নির্মাণাধীন অবকাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন ঠাসা। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের একসময়ের যে গর্ব ছিল, তা–ও ফিকে হয়ে গেছে বলা যায়।

কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যে উন্নয়ন, তা আসলে কতটা সুফল দিচ্ছে, সেটিই এখন প্রশ্ন। নতুন নির্মিত দুটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করলেও সেখানে থাকার কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। শিক্ষার্থীরা যদি ঠিকঠাক আবাসন–সুবিধাই না পান, তাহলে নতুন করে আবাসিক হল কেন নির্মাণ করা হলো?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়টি আবাসিক হলের মধ্যে দুটি হলের নির্মাণকাজ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। নবনির্মিত ফজিলাতুন্নেছা ও শেখ রাসেল হলে গত জানুয়ারির শেষে শিক্ষার্থীদের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

কথা ছিল আবাসিক হলগুলো হবে অত্যাধুনিক। থাকবে শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ। কিন্তু হলে উঠে শিক্ষার্থীরা শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীদের জন্য এটিই তো যথেষ্ট, এর চেয়ে আর বেশি কিছু কেন দরকার—এমন মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে সেখানে। কারণ, সাত মাস পেরিয়ে গেলেও চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত পাননি শিক্ষার্থীরা। হালকা বৃষ্টিতেই শিক্ষার্থীদের কক্ষে পানি ঢুকে পড়ে।

১০তলাবিশিষ্ট হল দুটিতে সমস্যার শেষ নেই। ওঠানামার জন্য সব কটি লিফট এখনো চালু না করায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। যে কয়টি লিফট চালু আছে, সেগুলোও অনেক সময় যান্ত্রিক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে।

ডাইনিং বা ক্যানটিন চালু না থাকায় অন্য হলে গিয়ে বা বাইরে কোনো খাবার দোকানে গিয়ে খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন গণরুমে থাকার পর হলে উঠে তাহলে কী লাভ হলো? প্রশাসন তাঁদের সমস্যা আমলেই নিচ্ছে না।

নতুন হলের সমস্যা নিয়ে উপাচার্য নূরুল আলম বলেন, ‘প্রকল্প অফিসকে আমি বলে দিয়েছি দ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে।’ অন্যদিকে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, ভবনের নকশায় ত্রুটির কারণে কক্ষে পানি ঢুকে থাকে। যাঁরা এই ভবনের নকশা করেছেন, তাঁরাই এটি ভালো বলতে পারবেন। পরিকল্পনা পরিচালক হিসেবে তিনি কোনো দায় নিতে চাননি।

তাঁদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উন্নয়নের নামে একধরনের তামাশাই করা হয়েছে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, আর সমালোচনার তো শেষ ছিল না। তার ফলাফল এভাবেই ধরা দিচ্ছে। নির্মাণাধীন অন্য হলগুলোর অবস্থাও কি এমন হবে? নতুন হল দুটির সব সমস্যা দ্রুত নিরসন করা হোক।