পরিচালক কেন অনিয়মের খবর রাখেন না

সম্পাদকীয়

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভালোই ছিল—প্রান্তিক পেশাজীবী জাতিগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়ন। প্রকল্পের আওতায় আরও কত-কী করার ছিল, যেমন প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুবিধা, ঢাকায় বিপণনকেন্দ্র করে তাদের পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করা।

দেশের ২০ জেলার ১০২টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছিল। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর লালমনিরহাটে ভুয়া পেশাজীবী সাজিয়ে প্রকল্পের টাকা মেরে দিয়েছে।

কর্মকর্তারা কাগজে-কলমে কামার, কুমার, নাপিত, বাঁশ-বেতের পণ্য প্রস্তুতকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আদতে প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকায় ধনী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা এবং উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যের নাম আছে। মোট প্রশিক্ষণ পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ জনের নাম-ঠিকানাই ছিল ভুয়া।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক স্বীকার করেছেন যে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তাঁদের পরিবারের নাম এসেছে। এ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেকের সুপারিশও রাখতে হয়েছে। যদিও এই প্রকল্পের পরিচালক সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. কামরুজ্জামান অনিয়মের খবর তাঁর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন।

প্রশিক্ষণার্থীদের নামের তালিকায় নয়ছয় কিংবা প্রকল্পের টাকা তছরুপ করার ঘটনা এবারই যে প্রথম ঘটল তা নয়; স্বজনতোষণ, জনগণের করের টাকা মেরে দেওয়ার ঘটনা আকছার ঘটেছে।

এর আগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’-এর অবস্থা দেখেছি। প্রকল্পের নাম বদলেও উন্নতি হয়নি। এর উদ্দেশ্য ছিল ৬০ লাখ পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা। তাঁরা সঞ্চয় জমা রাখবেন এবং স্বাবলম্বী হতে ঋণ নেবেন।

প্রশিক্ষণ পেয়ে দক্ষ কর্মী হবেন। প্রকল্প চালুর প্রায় ১০ বছর পর পত্রপত্রিকায় খবর বেরোয়, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদাসীনতা চরম। এ প্রকল্পের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে দেখা যায়, এত ঢাকঢোল বাজিয়ে শুরু করা প্রকল্প হুট করে শেষ হয়ে গেছে।

লালমনিরহাটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এই প্রকল্পের অনিয়ম শনাক্ত করা জরুরি। প্রকল্প পরিচালক অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন, সেখানে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।

বোঝা যাচ্ছে, প্রকল্প পরিচালক মাঠের খবর রাখেন না, প্রকল্প বাস্তবায়নেও যথেষ্ট যত্ন নেননি। আমরা চাই, প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রকল্প পরিচালক ভুল শুধরে নেবেন। তা না করে অসংগতির কথা প্রকাশ করায় মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হওয়া হবে অপরাধ।