সংকট সমাধানে আর কত অপেক্ষা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘদিন ধরে চলমান অচলাবস্থাকে দেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থার জন্য হতাশাজনকই বলতে হবে। ছাত্ররাজনীতি, প্রশাসনিক শূন্যতা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী দ্বন্দ্বের জটিলতার কারণে ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনের মধ্যকার আস্থার সংকট আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই স্থবিরতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কবে মুক্তি পাবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

প্রথমত, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো একরকম অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা ছাড়াও প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা আটকে আছে; ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থমকে গেছে—যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ভবিষ্যৎ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত উন্নয়নের ওপর।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক অনাস্থা এবং একে অপরের দাবিকে প্রহসন হিসেবে দেখা, সংকট নিরসনের পথকে আরও দীর্ঘায়িত করছে। শিক্ষকদের বিচারের দাবি যেমন যুক্তিসংগত, তেমনি শিক্ষার্থীদেরও নিরাপদ শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করার দাবি উপেক্ষিত হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা তাদের মানসিকভাবে প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘ সেশনজটের কারণে ভবিষ্যৎ পেশাজীবনেও তাদের ভুগতে হতে পারে। এখানে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ উপাচার্য দ্রুত নিয়োগ দিয়ে তাঁকে পূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান না করলে এই অচলাবস্থা আরও ঘনীভূত হবে।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান, তারা যেন অবিলম্বে একজন দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য উপাচার্য নিয়োগ দেয় এবং তার নেতৃত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো পক্ষ নিজেকে বঞ্চিত বা অসম্মানিত না ভাবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে বারবার রাজনীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার বলি না হয়, তা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন সংকট নতুন নয়। কিন্তু এভাবে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির পরিস্থিতি বিরাজ করা কোনো পক্ষের জন্যই সুফল দেয় না। তা ছাড়া এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক সুনামও ক্ষুণ্ন হয়। যাহোক, এখন সংকট কত দ্রুত নিরসন করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টারা এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেবেন।