অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ

সম্পাদকীয়

নতুন বছরকে বরণ করে নিতে গিয়ে পাখিদের সুরক্ষার বিষয়টি বারবার উচ্চারিত হয়ে আসছে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রবণতা। কারণ, আমাদের উদ্‌যাপন এমন সব অনুষঙ্গনির্ভর হয়ে গেছে, তা কোনোভাবেই পরিবেশবান্ধব নয়।

আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর কারণে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত তো হয়ই, পাখিদের জীবনও বিপন্ন হয়। এমনিতেই দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পাখি। তবে আমরা কিছুটা হলেও আশান্বিত হতে পারি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গড়ে ওঠা পাখির একটি অভয়াশ্রম নিয়ে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ‘একটি পক্ষী নিবাসের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি লেখা লিখেছিলেন পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ আ ন ম আমিনুর রহমান। তাঁর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের কুরমা টি এস্টেটে ছোট্ট একটি জায়গায় একটি পক্ষী নিবাসের অবস্থান সম্পর্কে।

কিন্তু চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের বাগান সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এই ছোট্ট জায়গার ঝোপঝাড়, শণ, নলখাগড়া, ঘাসবন ও গাছপালা কেটে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। সেই জায়গায় ৭৫-৮০ প্রজাতির পাখি ছিল। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষের অপরিণামদর্শী মনোভাবের কারণে সেই পক্ষী নিবাসে বিপর্যয় নেমে আসে।

আমরা সেই পক্ষী নিবাস নিয়ে সম্পাদকীয় করি। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে পক্ষী নিবাসটি রক্ষার আহ্বান জানাই বাগান কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে। চা–বাগান কর্তৃপক্ষেরও বোধোদয় হয়। গতকাল ২০২৩ সালের শেষ দিনে আমিনুর রহমান সেই পক্ষী নিবাস নিয়ে আবার একটি লেখা লিখেছেন। এক বছরের মাথায় সেই পক্ষী নিবাসটি শুধু রক্ষাই করা হয়নি, সেখানে একটি অভয়াশ্রমও গড়ে তোলা হয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের বন্য প্রাণী উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেজার্ড ওয়াইল্ডলাইফ’, মৌলভীবাজার বন বিভাগ ও কিছু পাখিবিশেষজ্ঞের সহযোগিতায় চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ‘কুরমা পাখি অভয়াশ্রম’-এর ঘোষণা দিয়েছে এবং সেখানে এ-সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দিয়েছে। যদিও পক্ষী নিবাসটি আগের সমৃদ্ধ অবস্থানে ফিরে আসেনি, এর জন্য ঢের সময় লাগবে।

ন্যাড়া হয়ে যাওয়া মাঠের কোথাও কোথাও ঝোপঝাড় সৃষ্টি হলেও বেশির ভাগ অংশই খোলা মাঠের মতো রয়ে গেছে। ফলে আগের তুলনায় পাখির সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তার অভাবে আনাগোনা কমে গেছে অনেক আবাসিক ও পরিযায়ী পাখির।

পাখির অভয়াশ্রমটি গড়ে তোলার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে সেটিকে কার্যতই অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টাও আমরা দেখতে চাই। সেখানে পর্যাপ্ত ঘাস, নলখাগড়া, বিষকাটালিগাছ লাগানোসহ সবুজ প্রকৃতি-পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পক্ষী নিবাসটির যে সর্বনাশ করা হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণের জন্য প্রধানত চা–বাগান কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই।