৯ জনের প্রাণহানির জন্য দায়ীদের ছাড় নয়

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বালু পরিবহন করা নৌযান বাল্কহেডের চলাচল ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে একের পর এক ঘটনা ঘটছে এবং এতে প্রাণহানিও বাড়ছে। সর্বশেষ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী নৌকাডুবিতে ৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনায় একটি মামলা করার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো কোনো আসামির নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। বাল্কহেডটিও জব্দ করা যায়নি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মেঘনা নদীতে পাশাপাশি দুটি রেল ও একটি সড়ক সেতু রয়েছে। এ তিন সেতুকে ঘিরে ভৈরব প্রান্তে একটি পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। স্থানীয় কিছু পর্যটকবাহী নৌকায় করে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মেঘনা নদীতে ঘুরে বেড়ান। গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এমন একটি পর্যটকবাহী নৌকা ডুবে যায় বাল্কহেডের ধাক্কায়। নৌকাটিতে আরোহী ছিলেন ১৫-১৮ জন। এ ঘটনায় কয়েক দিন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে মোট ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ এনে বাল্কহেডের সুকানি ও ইঞ্জিনচালকের বিরুদ্ধে পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন নিহত পুলিশ কর্মকর্তার বাবা। কিন্তু ঘটনার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার আসামিদের শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার বাদীর বক্তব্য, ‘দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সবার লাশ উদ্ধার করা হলো, দাফন হলো, কিন্তু সবাইকে যারা কবরে পাঠাল, তাদের ধরা গেল না। এমনকি তাদের নাম জানা গেল না। ভাবলে কষ্ট বাড়ে।’ স্থানীয় লোকজন ও অন্যান্য নৌকার মাঝিরা বলছেন, বাল্কহেডের সুকানি ও ইঞ্জিনচালকের নাম-পরিচয় জানা কঠিন কাজ নয়। বাল্কহেডের অবস্থান নিশ্চিত হওয়াও কঠিন নয়। কারণ, বাল্কহেডগুলোর বেশির ভাগ মালিক ভৈরব ও আশুগঞ্জের মানুষ। পেশা-সম্পর্কিত যেকোনো মানুষের কাছ থেকে তথ্যটি পাওয়া যেতে পারে।

বৈধ-অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে দেশের নদীগুলোর সর্বনাশ ঘটছে। সেসব বালু পরিবহনের কারণেই বেড়েছে বাল্কহেডের দৌরাত্ম্য। ভৈরবের মেঘনা নদীতে চলাচলকারী বাল্কহেডগুলো অধিকাংশ অবৈধ বলেই আমরা জানতে পারছি। তবে সেগুলোকে জব্দ করতে গিয়ে নানা অজুহাতও আছে। ভৈরব, সরাইল, আশুগঞ্জ, নবীনগর ও বাজিতপুর উপজেলা থেকে বাল্কহেডগুলো ভৈরবের মেঘনা নদীতে প্রবেশ করে থাকে। ফলে এক উপজেলার প্রশাসন ও নৌ পুলিশ নিজেদের দায় এড়িয়ে আরেক উপজেলার দিকে বিষয়টিকে ঠেলে দেয়। যার কারণে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে কত বাল্কহেড চলাচল করে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সব কটি উপজেলার প্রশাসন, নৌ পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেয় না? আমরা বাল্কহেডের ধাক্কায় আর কোনো নৌকাডুবি ও প্রাণহানির ঘটনা দেখতে চাই না। ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনার মামলার আসামিদের দ্রুত ধরা হোক।