সারা দেশে জোরদার অভিযান চলুক

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, চাঁদাবাজির পাশাপাশি খুনোখুনির ঘটনাও বেড়ে গেছে। এসব অপরাধের সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও ফলপ্রসূ অভিযান চালাতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছর অক্টোবরে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাসসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের খবর ছাপা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে ধরতে পারেনি। গত জানুয়ারি মাসে এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ী ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপের সন্ত্রাসীদের নাম আসে।

এই প্রেক্ষাপটে অন্যতম সহযোগীসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ধরা পড়া জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ আটজনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। ওই দিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে সুব্রত বাইনের উপস্থিতির খবর এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাঁর এক শিষ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকার তিনটি খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের নাম আসে। খুন ছাড়াও জমি, ফ্ল্যাট দখল ও চাঁদাবাজির একাধিক ঘটনায় সুব্রত বাইন ও তাঁর অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজধানীর হাতিরঝিলে গত ২১ এপ্রিল সুব্রত বাইনের অনুসারীদের গুলিতে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ সরদার (৩৫) নিহত হন। ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে অন্যদের মধ্যে সুব্রত বাইনের নামও ছিল।

১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০১ সালে তাঁর নামে ইন্টারপোলের নোটিশ জারি হয়, যা এখনো বহাল আছে। ইন্টারপোলে নোটিশ জারির পর কলকাতায় পালিয়ে যান সুব্রত বাইন। সেখানেও অপরাধের জগতে সক্রিয় থাকেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে যান নেপাল, আবার ধরা পড়েন।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, এ রকম একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কী করে মার্কেটে এসে প্রকাশ্যে মহড়া দেন? মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগ—এসব এলাকা ছিল সুব্রত বাইনের দখলে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, গত বছর আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জেলখানা থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। যেখানে লঘু মামলার আসামিরও জামিন পেতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়, সেখানে কীভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন?

জামিনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আবার তঁাদের কারাগারে ঢোকানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু গত কয়েক মাসে সরকার কোনো সন্ত্রাসীকে ফের কারাগারে ঢুকিয়েছে এমন প্রমাণ নেই।

মফস্‌সল তো বটেই, দিনদুপুরে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রগুলোয়ও ছিনতাই–ডাকাতি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে খুন–জখমের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়। প্রতিটি এলাকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হোক। সামনে কোরবানির ঈদ। অতএব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সড়ক–মহাসড়কেও নজরদারি বাড়াতে হবে।