স্ত্রী ঘুষ নিলে স্বামী দায়মুক্ত থাকেন কী করে

সম্পাদকীয়

সনদ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? তিনি ভুয়া সনদ দেওয়ার বিনিময়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

সেহেলা পারভীন ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ নন। তারপরও সনদ-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়লেন কীভাবে? স্বামীর পদের সুযোগ নিয়ে তিনি এই কাজ করেছেন, না স্বামীই তাঁকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন, সেটা তদন্ত হওয়া দরকার।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়ার গড়াই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি তাঁকে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। আর এই টাকা তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জাল সনদ প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে আটক হওয়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, প্রাথমিকভাবে সেহেলা পারভীনের বিরুদ্ধে শামসুজ্জামানের সঙ্গে টাকাপয়সা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান, সাবেক কর্মচারী ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের সনদ তৈরির নিজস্ব কারখানায় নিয়োজিত কম্পিউটারম্যান ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি, হিলফুল ফুজুল নামের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সরদার গোলাম মোস্তফা ও যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, এই সনদ-বাণিজ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকা কী? তাঁর অজ্ঞাতে সনদ-বাণিজ্য হয়েছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেহেলা পারভীন গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেই ব্যক্তি দায়িত্বে থাকতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সনদ-বাণিজ্য হলো, পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে লঘু শাস্তি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্দা বিভাগ বলেছে, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ঘুষের টাকা ধার বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

যেই শিক্ষা বোর্ডের ওপর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভাগ্য জড়িত, সেই বোর্ডে এ ধরনের কেলেঙ্কারি মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে যাঁরা ঘুষ দিয়েছেন, যাঁরা ঘুষ নিয়েছেন এবং লেনদেনের কাজে সহায়তা করেছেন, সবাইকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

আটক কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানের জবানবন্দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুজন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের আটজন সাংবাদিক ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে সনদ জালিয়াত চক্রের হাত অনেক লম্বা।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সদ্য সাবেকের বিরুদ্ধে এল সনদ জালিয়াতির অভিযোগ। অদক্ষতা ও অসততায় এর পদাধিকারী রেকর্ড সৃষ্টি করে চলেছেন।

সনদ জালিয়াতি বন্ধ করতে চাইলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপকর্ম করতে না পারে। অবিলম্বে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তদন্তকাজ শেষ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।