সিডিএ–সিটি করপোরেশন কী করছে

জলাবদ্ধতা এখন দেশের সব নগরীর বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সমস্যা আলাদাভাবেই উচ্চারিত হয়। কারণ, এক–দুই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতেই নগরটির অনেক এলাকা ডুবে যায়। সড়ক, নালা ও খাল তখন একাকার হয়ে যায়। চট্টগ্রাম শহরে উন্নয়নের শেষ নেই, কিন্তু জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আরও একটি বিষয় আতঙ্কের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরটিতে। নালা বা খালে পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। নালা বা খালে নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে কি এসব মৃত্যু রোধ করা যেত না? দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, নগর তদারকির প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে খুব একটা মনোযোগী হতে দেখা যাচ্ছে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত এক মাসে চট্টগ্রামের তিনটি খালে পড়ে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শেষ ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর জলাবদ্ধতার কারণে নগরের আছদগঞ্জ এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যান এক যুবক। পুরো খালের পাশে নেই কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী। ওই মৃত্যুর ঘটনার পর এলাকাবাসী সেখানে দড়ি দিয়ে একটি অস্থায়ী বেষ্টনী দিয়েছেন। এরপরও সেখানে আরও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

পাহাড়, সমুদ্র ও নদী দিয়ে ঘেরা চট্টগ্রামের নগর–পরিকল্পনায় প্রতিটি সড়কের সঙ্গেই যুক্ত আছে ছোট–বড় নালা। আর অনেক খাল হারিয়ে গেলেও যেগুলোর অস্তিত্ব এখনো আছে, সেগুলোও বৃষ্টির মৌসুমে হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। কিন্তু নগরের বেশির ভাগ নালাই উন্মুক্ত। নালায় স্ল্যাব আর খালগুলোয় নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকতে হবে, সেটি যেন গুরুত্বহীন। নালায় বা খালে পড়ে কেউ হতাহত হলেও কারও যেন কিছু যায় আসে না, ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে প্রায় ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এসবের ১০ শতাংশ নালায়ও নিরাপত্তাবেষ্টনীর কাজ হয়নি। তবে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা অধিকাংশ স্থানেই স্ল্যাব বসিয়েছেন।

একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় নগরে উন্মুক্ত খাল ও নালাগুলোর পাশে বেষ্টনী দেওয়া ও স্ল্যাব বসানোর কথা বারবার বলে আসছেন নগর–পরিকল্পনাবিদেরা। কিন্তু এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কোনো হুঁশ নেই। সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় প্রতিবারই খাল-নালায় বেষ্টনীর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে তা কেবল আলোচনায়ই সীমাবদ্ধ থাকে। মৃত্যুর ঘটনার পর শুধু অস্থায়ী বেষ্টনী দেওয়া হয়।

আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ আরও সচেতন হবে। মৃত্যুর ঘটনা রোধ করতে দ্রুত স্ল্যাব ও নিরাপত্তাবেষ্টনী বসানো হবে।