ঢালারচর-রাজশাহী রেলপথ: ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

দেশে কয়েকটি রেলপথে নিয়মিত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ফলে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই সেসব রেলপথে যাত্রীদের চলাচল করতে হয়। নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেও এই পাথর ছোড়ার ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রেলপথে চলাচল রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কারণ, রেলপথটিতে এক মাসে ২০ বারের বেশি চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ যাত্রীরা এর জন্য কোনো সংঘবদ্ধ চক্রকে দায়ী করছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনসহ নতুন রেলপথের উদ্বোধন করা হয়। এর কিছুদিনের মধ্যে যাত্রীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের শিকার হতে থাকেন। পরের মাসে ট্রেনটি সবচেয়ে বড় পাথর নিক্ষেপের কবলে পড়ে।

সেবার পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা ট্রেনে মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপ করলে ১০ জনের বেশি যাত্রী গুরুতর আহত হন এবং ট্রেনের ১৮টি জানালার কাচ পুরোপুরি ভেঙে যায়। এরপর পুলিশি তৎপরতা ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কিছুটা কমে যায়। এখন আবারও পাথর নিক্ষেপ বেড়ে গেছে এবং তা আরও বেশি মাত্রায়। এতে যাত্রী ও রেলকর্মীরা আহত হচ্ছেন।

পাথর ছোড়ার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে মনে হচ্ছে, উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে কোনো সংঘবদ্ধ চক্র এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। কারণ, এসব হামলা শুধু রাতের বেলাতেই ঘটছে। তা ছাড়া হুটহাট কোনো পাথর নিক্ষেপও নয়, বরং ট্রেনের দুই পাশ থেকে বৃষ্টির মতো টানা পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

স্থানীয় লোকজন এর জন্য স্থানীয় পরিবহনমালিকদের দায়ী করছেন। কারণ, এই ট্রেনে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। ট্রেনে এত বেশি ভিড় হয় যে পা রাখার জায়গাও থাকে না অনেক সময়। ট্রেন চালু হওয়ার আগে এসব মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল যাত্রীবাহী বাস।

এখন ট্রেনের কারণে বাসগুলোর যাত্রী অনেকটা কমে গেছে। এ-ও জানা যাচ্ছে, স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার এই রেলপথ চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর জন্যও বাসমালিকদের বিরোধিতার অভিযোগ পাওয়া যায়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এর আগে কয়েকবার পাথর ছোড়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তারা প্রায় সবাই কিশোর ছিল। সামাজিক সচেতনতা ছাড়া ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধ করা সম্ভব নয়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সে চেষ্টায় যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলেই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে প্রতীয়মান হয়। পাথর নিক্ষেপকারী সংঘবদ্ধ চক্রের পেছনে কারা যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।