সমন্বিত ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রয়োজন

সম্পাদকীয়

বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে শুক্রবার উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এটা ছিল ব্যতিক্রমী ঘূর্ণিঝড়। আগে কোনো ঘূর্ণিঝড় এত দীর্ঘ সময় স্থলভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যায়নি।

এই ঘূর্ণিঝড়ে এক পরিবারের চার সদস্যসহ এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যাঘোনা এলাকায় একটি কাঁচা ঘর ভেঙে চারজন মারা যান। ঘূর্ণিঝড়ে একটি ট্রলারডুবি ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ২০টি ট্রলারের ৩০০ জেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

অনেক সময়ই দেখা যায়, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ রুটিন কিছু কাজ করে থাকে। যেমন ভাঙা সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া। কিন্তু কাজটি কীভাবে হবে? ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপই–বা কে করবেন? দুর্যাগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তেমন লোকবল নেই, যঁারা ক্ষতির হিসাব করবেন। ফলে তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনের ওপরই নির্ভর করেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও তেমন সক্রিয়তা লক্ষ করা যায় না। আমলানির্ভর এই ত্রাণ কার্যক্রমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ত্রাণসামগ্রী পান বলে অভিযোগ আছে।

যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেসব এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জনজীবনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি ও শিল্পকারখানা চালু রাখতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এরপর যেসব কৃষকের শস্যখেত ও বীজতলা ডুবে গেছে, তাঁরা যাতে অবিলম্বে সেখানে চাষবাস করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে।

নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা গভীর উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় আছেন। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারকাজে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন আশা করি।

বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য দেখিয়েছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করেন। কিন্তু সেই সাফল্যের বিষয়টি কেবল দুর্যোগ–উত্তর পুনর্বাসন হলে চলবে না। দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সঠিক তথ্য দেওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারেন। সরকারি উদ্যোগে যেসব আশ্রয়শিবির করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প। আশ্রয়শিবিরের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথাও ভাবা যেতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী সংশ্লিষ্ট সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে দেবে আশা করি। সব উপজেলা বা জেলায় রুটিনমাফিক ত্রাণসামগ্রী দিলে কাজ হবে না। ত্রাণসামগ্রীর চেয়েও এখন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে কৃষি উপকরণ পৌঁছানো জরুরি। আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সমন্বিত কার্যক্রম নেবেন, যাতে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ত্রাণ ও কৃষি উপকরণ থেকে বঞ্চিত না হন।