রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যবসায় বাধা কেন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্প সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ।’ বরিশালে বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছিল ৫ নভেম্বর। কিন্তু গৌরনদী ও আগৈলঝড়ায় এর রেশ রয়ে গেছে এখনো। গত এক সপ্তাহে এই দুই উপজেলার ২৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দুটি নিবন্ধিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বন্ধ করেনি। বন্ধ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতারা। কেবল তা–ই নয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপির ১০ জন আহতও হয়েছিলেন। 

প্রথম আলোয় শুক্রবার এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই দিনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ১৬টি দোকান ও একটি এনজিও অফিস খুলে দেন। তঁারা দোকানের মালিকদের এই বলে অভয় দেন যে নির্বিঘ্নে তাঁরা ব্যবসা করতে পারবেন। কোনো সমস্যা হবে না। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত বাকি দোকান ও একটি এনজিও তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। এই এনজিওর পরিচালক আনোয়ার খান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এনজিওর পরিচালনা পর্ষদে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করলে সেটিও খুলে দেওয়া হবে। এটা কি মামাবাড়ির আবদার? এই এনজিওর সঙ্গে এলাকার অনেক গরিব মানুষের ভাগ্য জড়িত। এটি বন্ধ থাকলে এর কর্মকর্তা–কর্মচারীরাই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এর উপকারভোগীরাও। বিএনপির নেতার এনজিও আওয়ামী লীগারদের জবরদস্তিভাবে ভাগ বসানোর কি যুক্তি থাকতে পারে, তা–ও একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে? 

উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এনজিও কর্মকর্তারা বিএনপি করতে পারেন। আবার কেউ বিএনপি না করেও তাঁদের সমাবেশে যেতে পারেন। সে জন্য তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো তালাবদ্ধ করে দেওয়া হবে? দেশে কি আইনকানুন বলে কিছু নেই? ক্ষমতাসীন দলের বাঘা বাঘা নেতারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা উচ্চারণ বলেন। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কত বছর আগে কোথায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তারও বিশদ বিবরণ দেন। বিএনপির নেতাদের দোকান ও এনজিও তালাবদ্ধ করে তাঁরা কী ধরনের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চান?

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা যা খুশি তাই করতে পারেন?  বিএনপি নিষিদ্ধ কোনো দল নয়। তাদের সমাবেশে কেন উল্লিখিত দোকানের মালিক ও এনজিও কর্মকর্তারা যেতে পারবেন না?

আওয়ামী লীগ রাজপথ থেকে উঠে আসা একটি দল। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামেও তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। ভাবা যায়, এই দলের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও এনজিও বন্ধ করে খোলার শর্ত হিসেবে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পূর্বশর্ত জুড়ে দিয়েছেন! আইনের শাসনের প্রতি ন্যূনতম আস্থা থাকলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এটা করতে পারতেন না। 

এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা কেবল অগ্রহণযোগ্য নয়; দায়িত্বহীনও। কারও দোকান, অফিস দখল হয়ে যাওয়ার পরও লিখিত অভিযোগ দেওয়ার দরকার হবে কেন? জবরদখল থেকে প্রতিষ্ঠান উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ।

আমরা আশা করছি, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর বন্ধ বাকি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও এনজিওটি অবিলম্বে খুলে দেওয়া হবে। এমন অপকর্মের জন্য দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হোক।