৯৮ ভাগ মামলা অনিষ্পন্ন থাকে কীভাবে

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার তদন্তকাজ ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু এ আইনে দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলা মাসের পর মাস ঝুলে আছে। তদন্ত শেষ না হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিচারের আগেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার জানাচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ ক্ষেত্রে আসামিরা আদালতের মাধ্যমে সাজা বা খালাস পেয়েছেন কিংবা মামলাটি খারিজ হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ১ হাজার ১০৯টি মামলার রেকর্ড হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ হয়েছে ফেসবুকের কার্যক্রমের জন্য। এসব মামলায় মোট ২ হাজার ৮৮৯ জনকে আসামি করা হয়েছে; যঁাদের মধ্যে মাত্র ৫২ জন মামলা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি পেয়েছেন। বাদী মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নিস্তার পেয়েছেন ৯ জন।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ‘পুলিশ এখনো এক হাজার বা তার বেশি মামলার মধ্যে মাত্র তিন-চতুর্থাংশ তদন্ত করছে। এর মধ্যে ৭২৫টি ২০২২ সালের আগে থেকে চলছে। অর্থাৎ, মামলাগুলো তদন্ত সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনি বিধান মানেনি।’ আইনে বলা হয়েছে, ৬০ দিনের মধ্যে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারেন। ৭৫ দিন পরে তাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এটি তখন ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারে চলে যায়।

সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা যে মামলাগুলোর তদন্তকাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি, সেগুলো দ্রুত শেষ করা উচিত। নির্দিষ্ট সময়ের পর কোনো আসামিকে আটক রাখাও গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ বাস্তবতা হলো মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেলখানাতেই থাকতে হচ্ছে। নির্ধারিত ৭৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া না হলেও আসামিরা হেফাজতে রয়েছেন এবং বিচারের আগে শাস্তি পাচ্ছেন।

আসামিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক। অন্তত ২৮৭ জন রাজনীতিবিদ এবং ২৮০ জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। আর এসব মামলার বেশির ভাগের বাদী ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা ন্যায়বিচারের জন্য মামলা করেননি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্যই এসব করা হয়েছে।

২০১৮ সালে যখন আইনটি জারি হয়, তখন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জোরালো প্রতিবাদ হয়েছিল। সে সময় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, এ আইন মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। বাস্তবে তাই ঘটেছে। দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থা এ আইনকে ‘দমন-পীড়নমূলক’ আইন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সরকারকে অনুধাবন করতে হবে, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ে। সেই অর্থে এ আইন গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি।

আমরা অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, এ আইনে দায়ের করা অনিষ্পন্ন ৯৮ শতাংশ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং এ আইনের অধীনে যঁারা কারাগারে আছেন, তঁাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।